আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবী কেন প্রতি ২৬ সেকেন্ডে কাঁপে, আর বিজ্ঞানীরা কেন ৬০ বছর পরও এর ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না? এটি এক রহস্য, যা একটি নিয়মিত ছন্দময় কম্পনের মধ্যে আবদ্ধ। এটি হতে পারে এক ধরনের হারমোনিক ঘটনা, সূর্যের শক্তি দ্বারা সৃষ্ট নিয়মিত ভূকম্পন, অথবা এমন এক সংকেত যা বিজ্ঞানীদেরকে তার উৎসের দিকে আহ্বান জানায় এক ধন-অন্বেষণের মতো।


১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ভূতত্ত্ববিদ জ্যাক অলিভার প্রথমবার এই স্পন্দন বা “মাইক্রোসিজম” নথিভুক্ত করেন। সে সময় তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লামন্ট-ডোহার্টি ভূতাত্ত্বিক গবেষণাগারে কর্মরত ছিলেন। অলিভার সেই শব্দটি শুনতে পান, তবে তার হাতে তখনকার দিনে বর্তমান ভূকম্পবিদদের উন্নত যন্ত্রপাতি ছিল না।

আরও পড়ুন: একই সাপের দু’ধরণের বিষ, অবাক করা তথ্য এল বিজ্ঞানীদের সামনে


তারপর থেকে বিজ্ঞানীরা বহু সময় ব্যয় করেছেন এই স্পন্দন শুনতে এবং এমনকি এর উৎস খুঁজে বের করতেও সফল হয়েছেন। ডিসকভার ম্যাগাজিন অনুযায়ী, এটি আসে গিনি উপসাগরের এক অংশ থেকে, যা “বাইট অব বনি” নামে পরিচিত। কিছু গবেষক মনে করেন এর কারণ একেবারেই সাধারণ। বিশ্বের মহাসাগরের তলদেশে কন্টিনেন্টাল শেলফ এক বিশাল ঢেউ-ভাঙার প্রাচীরের মতো কাজ করে। এটি এমন এক সীমারেখা, যেখানে মহাদেশীয় পাত ধীরে ধীরে শেষ হয়ে গভীর সাগরের গহ্বরে নেমে যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, যখন ঢেউ গিনি উপসাগরের ওই নির্দিষ্ট অংশে গিয়ে আঘাত করে, তখনই এই নিয়মিত স্পন্দন সৃষ্টি হয়।


যদি এটি অবিশ্বাস্য মনে হয়, তাহলে ড্রামের নানা আকারের কথা ভাবুন—টিম্পানি, বেজ ড্রাম, বংগো—সবই আলাদা ধরনের শব্দ তোলে। সুতরাং এক বিশেষ আকৃতির “কন্টিনেন্টাল শেলফ ড্রাম” পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো সঠিক কম্পন তৈরি করতে পারে, এমনটা অসম্ভব নয়। আর যদি সত্যিই তা হয়, তবে আমরা ভাগ্যবান যে এটি শুধু এক জায়গাতেই ঘটছে।


তবে অন্য গবেষকরা মনে করেন এর উৎস হতে পারে একটি আগ্নেয়গিরি, যা ওই নির্দিষ্ট স্থানের একেবারে কাছে। ডিসকভার  ব্যাখ্যা করেছে, স্পন্দনের উৎস সন্দেহজনকভাবে কাছেই অবস্থিত সাও টোমে দ্বীপের একটি আগ্নেয়গিরি। এর আগে জাপানে একটি অনুরূপ আগ্নেয় মাইক্রোসিজম নথিভুক্ত হয়েছে।


আজকাল প্রতিদিনই প্রচুর নতুন বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশিত হয়, কিন্তু এই রহস্যময় স্পন্দন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এখনও কত কিছু আবিষ্কারের বাকি আছে। বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে গবেষণা করছেন এবং উৎস নিয়ে বিতর্ক চালাচ্ছেন, কিন্তু এটি এখনও এমন পর্যায়ে পৌঁছায়নি যেখানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা হবে।


ডিসকভার  বলছে, সম্ভবত গবেষকরা এতদিন অন্য উচ্চ-প্রাধান্য পাওয়া ভূকম্পনমূলক ঘটনাগুলোর দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এর ব্যাখ্যা যথেষ্ট যৌক্তিক। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে, যখন বৈশ্বিক লকডাউনের কারণে পৃথিবী তুলনামূলকভাবে ভূকম্পনগতভাবে “নীরব” হয়ে পড়েছিল, তখন ভূকম্পবিদরা এই সুযোগ কাজে লাগান। মজার বিষয় হল প্রতি বছরই বড়দিনের আগের কয়েক দিনে এমন ভূকম্পনগত নীরবতা ঘটে।