আজকাল ওয়েবডেস্ক: ব্রিটেনের তিন কিশোর সম্প্রতি সবার নজর কেড়েছে এক অভিনব প্রস্তাব দিয়ে। ১৪ ও ১৩ বছর বয়সী এই তিনজন কনডমকে যৌনরোগ শনাক্ত করার উপায় হিসেবে ব্যবহার করার ধারণা দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবিত কনডম যৌন সংসর্গের সময় যদি কোনো যৌনবাহিত রোগের জীবাণুর সংস্পর্শে আসে, তবে সেটি রঙ বদলে সতর্ক সংকেত দেবে। যেমন ক্ল্যামিডিয়া থাকলে কনডম সবুজ রঙে, হারপিস হলে হলুদ, এইচপিভি হলে বেগুনি আর সিফিলিস হলে নীল হয়ে উঠবে।
এই অভিনব ধারণার জন্য তারা যুক্তরাজ্যের টিনটেক পুরস্কারে সেরা সম্মান পেয়েছে। ইতিমধ্যেই কিছু কনডম কোম্পানি তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারণাটি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। কনডমটি ব্যবহারকারীর রোগ ধরতে পারবে নাকি শুধু সঙ্গীর, একাধিক রোগ থাকলে কীভাবে রঙ নির্ধারণ হবে—এসব প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত। একই সঙ্গে এর জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান শরীরের জন্য নিরাপদ কি না, নিয়মিত উৎপাদনে খরচ কতটা হবে এবং ব্যবহারকারীরা বাস্তবে কতটা এটি গ্রহণ করবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
এর আগে ২০১৫ সালে লন্ডনের কিশোরদের বানানো এস.টি.আই কনডম এবং ২০১৭ সালে ঘোষিত আই.কন স্মার্ট কনডম অনেকে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে বাজারে আসেনি। ফলে যৌনরোগ প্রতিরোধে কার্যকর উপায় হিসেবে এখনও প্রচলিত কনডমই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
তবে কিশোরদের এই চিন্তাভাবনা প্রমাণ করছে, তারা শুধু যৌন কৌতূহলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নিরাপদ যৌনতার পথ নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে আগ্রহী। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যৌনশিক্ষা ও জনস্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বর্তমানে যৌনরোগ যেমন এইচআইভি, এইচপিভি বা সিফিলিস এখনো বিশ্বজুড়ে গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। উন্নত দেশেও কিশোর-তরুণদের মধ্যে সংক্রমণের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে যৌনশিক্ষার অভাব, অসচেতনতা এবং অরক্ষিত যৌন আচরণের কারণে সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কিশোরদের এমন উদ্ভাবনী চিন্তা নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে। যদিও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে শিগগিরই বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই, তবু এটি তরুণ প্রজন্মকে নিরাপদ যৌন আচরণের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও ভাবতে বাধ্য করছে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, কিশোরদের এ ধরনের প্রয়াস প্রমাণ করে যে নতুন প্রজন্ম শুধু যৌনতা নিয়ে কৌতূহল নয়, বরং যৌনস্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ জীবনযাত্রা নিয়েও গুরুত্ব সহকারে ভাবছে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্য উদ্যোগেও এই সৃজনশীল ভাবনাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত।
