আজকাল ওয়েবডেস্ক: টেক্সাসের এক ব্যক্তি হার্শেল রালস ১৯৯৯ সালে মূত্রথলির ক্যান্সারের জন্য অস্ত্রোপচার করাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অপারেশনের পর জেগে উঠে তিনি জানতে পারেন, চিকিৎসকরা কেবল তাঁর মূত্রথলিই নন, বরং তাঁর পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষও কেটে ফেলেছেন। এই খবর শোনার পর রালস ও তাঁর স্ত্রী থেলমা রালস দুজনেই স্তব্ধ হয়ে যান।

রালস বলেন, “আমার স্ত্রী আমার হাত ধরে বলেছিলেন, ‘হানি, ক্যান্সারটা পুরোপুরি কেটে ফেলা হয়েছে।’ কয়েক মিনিট পর তিনি যোগ করলেন, ‘কিন্তু তোমার পুরুষাঙ্গটাও কেটে ফেলতে হয়েছে।’ আমি তখন একেবারে রেগে গিয়েছিলাম,”— গুড মর্নিং আমেরিকা-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রালস এমনই প্রতিক্রিয়া জানান।

রালসের দাবি, অস্ত্রোপচারের আগে ডাক্তাররা কখনও তাঁকে বা তাঁর স্ত্রীকে জানাননি যে এমন কিছু ঘটতে পারে। তাঁর স্ত্রী থেলমা বলেন, “এটা নিয়ে একবারও আলোচনা করা হয়নি। অন্তত আমাদের জানানো উচিত ছিল যে এই সম্ভাবনা আছে, যাতে আমরা আগেই চিন্তা-ভাবনা করতে পারতাম।”

অস্ত্রোপচারটি করিয়েছিলেন উইচিটা ফল্‌সের ক্লিনিক্স অফ নর্থ টেক্সাস-এর চিকিৎসকরা। সার্জন পরে জানান, তিনি মনে করেছিলেন ক্যান্সারটি রালসের লিঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই অস্ত্রোপচারের সময়ই তা কেটে ফেলেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, কোনো টিস্যু পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়নি অপারেশনের আগে—সবকিছুই কাটা পড়ার পর ল্যাবে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন:  বয়স্ক রোগীর সামনে মিনিস্কার্ট পরে উদ্দাম নাচ নার্সের, ভিডিও দেখে অগ্নিশর্মা নাগরিকরা

ডালাসের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরে পরীক্ষার পর জানান, রালসের পুরুষাঙ্গে কোনো ক্যান্সারই ছিল না। অর্থাৎ, একটি ভুল ধারণার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটি অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে।

২০০৩ সালে আদালতের বাইরে মামলা মীমাংসা হয়। আর্থিক ক্ষতিপূরণের অঙ্ক প্রকাশ করা হয়নি, তবে হাসপাতাল বা চিকিৎসক কেউই নিজেদের দোষ স্বীকার করেননি। মামলাটি সেই সময়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাজনিত অবহেলা ও রোগীর informed consent বা “সচেতন সম্মতি”-র প্রশ্নে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

ঘটনাটি সাম্প্রতিককালে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর নেটিজেনদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এমনটা কীভাবে সম্ভব?”
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “কোনও ক্ষতিপূরণেই এই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।”
অন্য এক মন্তব্যে বলা হয়েছে, “সার্জনরা কখনও কখনও ভুলে যান যে তারা জীবন্ত মানুষের অঙ্গ নিয়ে কাজ করছেন, সিমুলেটরে নয়।”

হার্শেল রালস বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত, জীবনের এই অধ্যায় তাঁর কাছে এক গভীর মানসিক আঘাত হিসেবে থেকে গেছে। তাঁর কথায়, “আমি শুধু ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়িনি, আমাকে লড়তে হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধেও।”

এই ঘটনাটি আবারও প্রশ্ন তোলে—চিকিৎসা জগতে রোগীর সম্মতি ও মানবিকতার সীমারেখা ঠিক কোথায়?