আজকাল ওয়েবডেস্ক: একসময় জাপানের আকাশ থেকে ঝরে পড়ত মৃদু, শান্ত বৃষ্টি। এখন সেই একই আকাশ থেকে নামে প্রবল বর্ষণ। এমন বৃষ্টি, যা মাটি ভেঙে, পাহাড় সরিয়ে, জনপদ বদলে দিতে পারে।
পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ওঠা তাপ শুধু সমুদ্র গরম করছে বা বরফ গলাচ্ছে না; এটি বাতাসকেও ঘন করে তুলছে। বাতাসের ভেতরে জমছে অদৃশ্য জলীয়বাষ্প, যা সঠিক “ট্রিগার”-এর অপেক্ষায় থাকে যেন এক মুহূর্তেই মেঘ ফেটে সব ঢেলে দিতে পারে।
কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা খুঁজে দেখেছেন, এই “ট্রিগার” লাগলে আসলে কী ঘটে। তাদের গবেষণা দেখিয়েছে, বিশ্বের উষ্ণতা কীভাবে বৃষ্টির ছন্দকে বিকৃত করছে এবং কেন জাপানের আবহাওয়া এখন এত অনিশ্চিত।
তাপমাত্রা বাড়লে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে এটা আমরা জানি। কিন্তু সেই জলীয়বাষ্প বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হবে কি না, তা নির্ভর করে অনেক জটিল প্রক্রিয়ার উপর।
আরও পড়ুন: ‘ইনফোসিসে কাজ করেন বলেই কি তারা সবজান্তা’, মূর্তি দম্পতিকে কড়া বার্তা দিলেন
গবেষণার প্রথম লেখক শ্রীধর নায়ক বলেন, “আমরা জানি, প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাতাসে জলীয়বাষ্পের সম্পৃক্ততা প্রায় ৭% বাড়ে। কিন্তু সব জলীয়বাষ্পই বৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয় না। তাই এই ৭% হারের ‘স্কেলিং’ আসল বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কি না, সেটাই ছিল আমাদের প্রশ্ন।” তারা জাপান মেটিওরোলজিক্যাল এজেন্সির সিমুলেশন ডেটা ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করেন—যদি পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি বাড়ে, তাহলে কী ঘটবে? দেশটিকে সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে দেখা হয় বৃষ্টির ধরণে পরিবর্তন। ফলাফল ছিল স্পষ্ট—আরও প্রবল ঝড়, ভারী বৃষ্টি, এবং অঞ্চলভেদে নতুন জলবায়ুগত বৈষম্য।
গবেষকরা দেখেন, নিচের বায়ুমণ্ডল—বিশেষত ৮৫০ হেক্টোপ্যাসকেল স্তরে—বৃষ্টির মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে। এখানে তাপমাত্রা বাড়লে আর্দ্রতাও প্রায় নিখুঁত সঙ্গতিতে বাড়ে, প্রতি ১ ডিগ্রি উষ্ণতায় প্রায় ৭–৮%। কিন্তু উপরের স্তরে (প্রায় ৫০০ hPa) বাতাস পাতলা, সেখানে সম্পর্কটি দুর্বল। ফলে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত ঘটে তখনই, যখন নিচের স্তর উষ্ণ ও জলীয়বাষ্পে ভরা থাকে। যখন তাপমাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তখন বাতাস শুকিয়ে যায়, আর বৃষ্টি কমে যায়।
জাপানের দক্ষিণে ওকিনাওয়া অঞ্চলে একদিনে ২৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়, উত্তরে তুলনামূলক কম। সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকাগুলো দীর্ঘসময় আর্দ্র থাকে, কারণ সাগর ক্রমাগত জলীয়বাষ্প সরবরাহ করে। অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো দ্রুত শুকিয়ে যায়। তাই উপকূলে তাপমাত্রা ও বৃষ্টির সম্পর্ক ২৩°C পর্যন্ত বজায় থাকে, অথচ স্থলভাগে সেটি থেমে যায় ২০°C-এর আশেপাশে। অর্থাৎ, ভূগোলই নির্ধারণ করছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ধরণ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতে জাপানের নিচের বায়ুমণ্ডলে প্রতি কিলোগ্রাম বাতাসে প্রায় ৫ গ্রাম বেশি জলীয়বাষ্প থাকবে। এতে বাতাস হবে ভারী, ঝড় আরও উঁচুতে উঠবে, আর বৃষ্টি আরও প্রবল হবে। অবাক করার বিষয়, উপরের ও নিচের স্তরের তাপমাত্রার পার্থক্য তেমন বদলাবে না। অর্থাৎ, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত আসবে শুধু আর্দ্রতার সঞ্চয় আর শক্তিশালী উর্ধ্বমুখী বায়ুপ্রবাহের কারণে। ভবিষ্যতের ঝড়ের ইঞ্জিন তাই হবে সহজ।
উষ্ণ বাতাস যত বেশি জল ধরে রাখবে, ততই বেশি বৃষ্টি নামবে। কিন্তু কঠিন প্রশ্ন হল আমরা কতটা প্রস্তুত? আগামী দিনের জাপানের সামনে চ্যালেঞ্জ হবে আরও সূক্ষ্ম আবহাওয়া মডেল তৈরি, উন্নত বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা, এবং নমনীয় নগর পরিকল্পনা। জাপান জানে, বৃষ্টি কী করতে পারে।
এখন প্রশ্ন একটাই যখন সেই প্রবল বৃষ্টি আবার আসবে, আমরা কি প্রস্তুত থাকব?
