আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রধানত দক্ষিণ মেরুর আশেপাশের অঞ্চলে পেঙ্গুইনের বসবাস। বরফশীতল সাগরবাসী এই প্রাণীদের শিকার ও সাঁতার কৌশল দুর্দান্ত। এরা মাছ শিকার করে খেয়ে থাকে। এদের পেটের দিক ধবধবে সাদা। বাকি অংশ কালো।


হাঁটতে খুব বেশি দক্ষ না হলেও এরা উপুড় হয়ে ডানা দুপাশে নেড়ে পিচ্ছিল বরফের ওপর দিয়ে এগিয়ে যায়। পরিবেশ রক্ষায় এদের অবদান অনস্বীকার্য। 


সাগরের প্রাণী হওয়ায় এরা সামুদ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে। এরা সেন্ডিনেল স্পিসিস হিসেবে পরিচিত। সাগরের গভীর জীবন, পরিবেশ ও রহস্য সম্পর্কে এরা বিজ্ঞানীদের ধারণা দিয়ে থাকে।  


পেঙ্গুইনরা পরিবেশের খাদ্যশৃঙ্খল ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এরা সাগরের বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করে থাকে এবং শৃঙ্খলের ভারসাম্য রক্ষা করে। এরা যেমন অনেক প্রাণীদের ভক্ষণ করে, এরা আবার অনেক প্রাণীর খাদ্য। এরা পরিবেশ থেকে হারিয়ে গেলে শৃঙ্খল ভেঙে গিয়ে ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে পরিবেশিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। 

পেঙ্গুইনের মল জল পরিষ্কারে ভূমিকা রাখে। এছাড়া মাটিকে উর্বর করে। এদের মল মাটিতে পুষ্টি উপাদান বাড়িয়ে দেয়। ফলে মেরু অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মাতে সাহায্য করে। এছাড়া সাগরের তলদেশে জন্মানো বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে এরা ভূমিকা রাখে। ভূমিকে উর্বর রাখতে হলে এদের সংরক্ষণ জরুরি। 


পরিবেশের বাস্তুতন্ত্রে কোনও অসঙ্গতি দেখা দিলে এরা প্রথমে বুঝতে পারে এবং ইঙ্গিত দেয়। যা দেখে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছুই বুঝতে পারেন। বরফশীতল মহাদেশের অভ্যন্তরীণ বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় এরা অনুঘটকের কাজ করে। 


পেঙ্গুইন পর্যটনে ভূমিকা রাখে। প্রাণীপ্রেমী অনেকেই এদের দেখতে মেরুতে ছুটে যান। মেরু অঞ্চলের অর্থনীতির বিকাশে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে পেঙ্গুইনের ভূমিকা অপরিসীম।


পেঙ্গুইন জলে ও স্থলে বাস করার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজন ক্ষমতা অর্জন করেছে। আর তাই এরা দুই পরিবেশেই টিকে থাকতে পারে।  


সাঁতারে এদের দক্ষতা বেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সাঁতারের বিশেষ দক্ষতা থাকায় পেঙ্গুইন উড়তে পারে না। সাঁতারের জন্য এদের ডানা বিশেষভাবে অভিযোজিত। প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জলেতে সাঁতার কাটে বলে ওড়ার মতো যথেষ্ট শক্তি এদের থাকে না। এছাড়া এদের ডানা আকারে ছোট।  


প্রতিবছর দক্ষিণ অ্যামেরিকার উপকূলে হাজারো পেঙ্গুইন আটকা পড়ে। সেসব পেঙ্গুইনের মধ্যে দেখা যায় পুরুষ পেঙ্গুইনের চেয়ে তিনগুণ বেশি মেয়ে পেঙ্গুইন মারা পড়ে বা আহত অবস্থায় থাকে।

আরও পড়ুন: স্বাভাবিকের তুলনায় ভাল বর্ষা দেখছে দেশবাসী, চলবে আরও অনেকদিন


জাপান এবং আর্জেন্টিনার বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এক গবেষণায় দেখেছেন, ম্যাগলানিক প্রজাতির মেয়ে পেঙ্গুইনেরা খাবারের খোঁজে পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি হারে উত্তরের দিকে মাইগ্রেট বা অভিবাসী হয়ে যাচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে আহত হচ্ছে বা মারা পড়ছে।


সম্প্রতি বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল কারেন্ট বায়োলজিতে গবেষণায় এমন ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ অ্যামেরিকার উপকূলে প্রতি বছর শীতের সময়ে হাজার হাজার ম্যাগলানিক প্রজাতির পেঙ্গুইন আটকে পড়ে, হয় মৃত বা ভয়ংকরভাবে আহত। সাগরে ভেসে থাকা তেল নিয়ে তাদের শরীরগুলো ভেসে থাকে ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া জলে। যদিও পেঙ্গুইনের পালক সবসময় শুকনো থাকে। তবু তেল মাখা শরীরে তাদের সাতার কাটতে কট হয়, ফলে ঠাণ্ডা জলে তাদের টিকে থাকা মুশকিল হয়।