আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এআইএম-১২০ অ্যাডভান্সড মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল পেতে চলেছে যা দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে জানিয়েছে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ ওয়ার।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ ওয়ার সম্প্রতি সংশোধিত এক অস্ত্রচুক্তির বিজ্ঞপ্তিতে পাকিস্তানকে রেথিয়ন নির্মিত এই উন্নত মিসাইল ব্যবস্থার অনুমোদিত বিদেশি ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই চুক্তির আওতায় আরও ৪১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিরিক্ত অর্থ পেয়েছে, যা আগের চুক্তির সম্প্রসারিত সংস্করণ। এর ফলে মোট চুক্তির মূল্য দাঁড়িয়েছে ২.৫১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।


তবে কতগুলো মিসাইল পাকিস্তান পাবে, সেবিষয়ে মার্কিন বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি দেশও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হবে ২০৩০ সালের মে মাসের মধ্যে।

আরও পডুন:  কমল ঋণের সুদের হার, কতটা স্বস্তি দেবে ইএমআই


পাকিস্তানকে এই প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে দেশটির এয়ার ফোর্সের এফ-১৬ বহরের আধুনিকীকরণ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ AMRAAM মিসাইল শুধুমাত্র এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০১৯ সালে পাকিস্তান এই মিসাইল ব্যবহার করে ভারতীয় বায়ুসেনার মিগ-২১ বিমান গুলি করে নামিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠে। 


প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণ সংস্থা তথ্য অনুযায়ী, এই নতুন চুক্তির আওতায় থাকা AIM-120C8 সংস্করণটি মূলত AIM-120D-এর রপ্তানি সংস্করণ, যা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেবায় থাকা সবচেয়ে উন্নত AMRAAM ভ্যারিয়েন্ট। পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে পুরনো C5 সংস্করণ রয়েছে—যার প্রায় ৫০০ ইউনিট দেশটি ২০১০ সালে ব্লক-৫২ এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার সময় যুক্ত করেছিল।


এই প্রতিরক্ষা উন্নয়নের পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি। গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। এর আগে জুন মাসে আসিম মুনিরের সঙ্গে ট্রাম্পের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যা অনেকের কাছে “অস্বাভাবিক কূটনৈতিক ইঙ্গিত” হিসেবে দেখা হয়।


জুলাই মাসে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবরও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে যান। এর পর থেকেই দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও সহযোগিতায় নতুন গতি এসেছে, বিশেষ করে চলতি বছরের মে মাসে ভারত–পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের পর।


সেই সংঘর্ষের পর পাকিস্তান প্রকাশ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুদ্ধবিরতি মধ্যস্থতায় ভূমিকার জন্য কৃতিত্ব দেয় এবং এমনকি তাঁর নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করে। তবে ভারত এই দাবি সরাসরি নাকচ করে জানায়, যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণভাবে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেলস অফ মিলিটারি অপারেশন্সর সরাসরি আলোচনার ফলেই সম্ভব হয়েছে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–পাকিস্তান সম্পর্কের এই সামরিক দিকটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য সৃষ্টি করতে পারে। AIM-120C8 মিসাইল প্রাপ্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তার এয়ার ফোর্সের “বিয়ন্ড ভিজুয়াল রেঞ্জ” ক্ষমতা আরও জোরদার করবে। তবে ভারতের দিক থেকে এটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, কারণ নতুন এই সমঝোতা কৌশলগত ভারসাম্যে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।