আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৯৬০ সালে তৈরি হয়েছিল মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক আলফ্রেড হিচককের 'সাইকো'। যে ক্রাইম থ্রিলার দেখে শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছিল, মানুষের মনস্তত্ত্ব ও অপরাধপ্রবণতার দিকগুলো। কিন্তু এই সিনেমা তৈরির প্রায় ৩০ বছর আগে আরও একটি ঘটনা ঘিরে শোরগোল ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে।
এক স্বাস্থ্য কর্মী তাঁর প্রেমিকার মৃতদেহ নিয়ে সাত বছর সংসার করেন। সাজিয়ে, গুছিয়ে কঙ্কালের রূপ বদলে দিয়েছিলেন। সেই কঙ্কাল নিয়ে রাতে ঘুমাতে যেতেন তিনি। কয়েক দশক কেটে গেলেও, সেই প্রেমের কাহিনি এখনও ভোলেননি বিশ্বের মানুষ। যা বারবার মনে করিয়ে দেয় হিচককের 'সাইকো'কে।
কার্ল ট্যানজলার ও ইলিনা দ্য হয়োসের প্রেমের সম্পর্ক আর পাঁচটা সাধারণ সম্পর্কের মতো নয়। এমনই এক সম্পর্ক, প্রেমিকার মৃত্যুর পরেও, মৃতদেহের সঙ্গে সাত বছর কাটালেন এক স্বাস্থ্য কর্মী।
১৯৩১ সাল। ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টের মেরিন হাসপাতালে ইলিনাকে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই সময় ইলিনা টিউবারকিউলোসিস বা যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ওই হাসপাতালেই রেডিওলজিক টেকনিশিয়ান ছিলেন কার্ল ট্যানজলার। তিনি পেশায় চিকিৎসক ছিলেন না। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস ছিল, ইলিনাকে তিনি বাঁচাতে পারবেন।
আগেই ইলিনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কার্ল। একাধিকবার জানিয়েছিলেন, তিনি ইলিনাকেই ভালবাসেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন ইলিনা। অবশেষে ১৯৩১ সালের ২৫ অক্টোবর মাত্র ২২ বছর বয়সে ইলিনা যক্ষ্মায় মারা যান। হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন নানাধরনের চিকিৎসা করে ইলিনাকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন কার্ল।
আরও পড়ুন: রাতভর বৃষ্টি জেলায় জেলায়, আজ ৯ জেলায় প্রবল বর্ষণের চোখরাঙানি, আগামী সাতদিন দুর্ভোগেই কাটবে?
ইলিনার মৃত্যুর পর একটা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছিলেন কার্ল। সেখানেই রাখা ছিল ইলিনার দেহ। সেই স্মৃতিস্তম্ভেই রাখা থাকত একটি মোবাইল ফোন। ইলিনার মৃত্যুর পর টানা দুই বছর প্রতিদিন সেখানে যেতেন কার্ল। নিত্যদিন ফুল, উপহার নিয়ে ইলিনার মরদেহের পাশে রেখে দিতেন।
এরপর ১৯৪০ জানা যায়, ইলিনার মৃতদেহের সঙ্গেই বসবাস করেন কার্ল। ইলিনার বোন কার্লের বাড়িতে ছুটে যান। ঘরে ঢুকেই তিনি আঁতকে ওঠেন। ঘটনাটি সত্যি বলেই তিনি প্রথমে জানতে পারেন। জানা যায়, ১৯৩৩ সালে সেই স্মৃতিস্তম্ভ থেকে ইলিনার মৃতদেহ চুরি করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন কার্ল। মৃতদেহে কাঁচের চোখ, মোম, এবং ঘরের মধ্যে সুগন্ধি ছড়িয়ে রাখা থাকত। যাতে পচা দুর্গন্ধ থেকে কারো সন্দেহ না হয়।
প্লাস্টার দিতে মুখটি নতুন করে তৈরি করেছিলেন। ইলিনার চুল দিয়েই কঙ্কালের মাথায় পরচুলা পরিয়ে দিয়েছিলেন। সুন্দর পোশাক, গয়না পরিয়ে বিছানায় শোয়ানো থাকত তাঁকে। অটোপসি রিপোর্টে নানা অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা ধরা পড়ে। তবে মৃতদেহের সঙ্গে যৌনতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
কার্লের বিশ্বাস ছিল, তিনি ইলিনাকে আবারও বাঁচিয়ে তুলবেন। একটি ল্যাব তৈরি করেছিলেন। এরোপ্লেনের মতো ছিল সেই ল্যাব। তাঁর ধারণা ছিল, ইলিনাকে স্ট্রেটোস্ফেয়ারে নিয়ে গেলে, তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। মৃতদেহ চুরির দায়ে কার্লকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর ইলিনার দেহটি আবারও স্মৃতিস্তম্ভে ফিরিয়ে আনা হয়। সেই সময় ছয় হাজার মানুষের ভিড় জমেছিল ইলিনাকে দেখার জন্য।
১৮৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় জন্মেছিলেন কার্ল। তিনি বিবাহিত ছিলেন। দুই সন্তান ছিল তাঁর। তিনি একজন কালো চুলের তরুণীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। সেই তরুণী ছিলেন ইলিনা। ১৯৫২ সালে তিনি মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর সময়েই কার্লের পাশে ছিল ইলিনার মতো দেখতে পুতুল।
