আজকাল ওয়েবডেস্ক: পৃথিবীর অনেক দেশ টিকে আছে এবং উন্নত হচ্ছে সেনাবাহিনী ছাড়াই। তারা নির্ভর করছে পুলিশ, আন্তর্জাতিক চুক্তি ও শান্তি-কেন্দ্রিক নীতির ওপর। যেমন কোস্টারিকা, আইসল্যান্ড কিংবা পানামা। এরা প্রমাণ করেছে যে, স্থায়ী সেনাবাহিনী না থাকলেও নিরাপদে থাকা সম্ভব। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এসব দেশ সেনাহীন থেকেও নিজেদের নিরাপদ রাখে।
কোস্টারিকা
কোস্টারিকা ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের পর সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করে। দেশটির বিশ্বাস—শান্তির পথে এগোনোর জন্য সামরিক শক্তি নয়, প্রয়োজন সামাজিক উন্নয়ন। ফলে সরকার সেনাবাহিনীতে ব্যয় না করে সেই অর্থ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে খরচ করে। একটি শক্তিশালী জাতীয় পুলিশ বাহিনী দেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখে। আজ কোস্টারিকাকে বিশ্বের শান্তির প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের নিজস্ব কোনও সেনাবাহিনী নেই। তবে দেশটি ন্যাটো জোটের অংশ এবং প্রতিরক্ষার জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে। তাদের রয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী ও একটি দক্ষ পুলিশ বাহিনী, যারা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। উত্তর আটলান্টিকের ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে নিরাপত্তার মূল ভরসা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: যখন দুটি মহাসাগর মিলেও মেশে না, রইল ভিডিও
পানামা
১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের পর পানামা সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে দেশটি সীমান্ত সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার জন্য পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর নির্ভর করছে। পানামার প্রধান লক্ষ্য হল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রচলিত সামরিক প্রতিরক্ষা নয়। এতে সামরিক ব্যয়ের পরিবর্তে দেশের উন্নয়নমূলক খাতে বিনিয়োগ সম্ভব হয়েছে।
মোনাকো ও ভ্যাটিকান সিটি
মোনাকো নিজস্ব সেনাবাহিনী না থাকলেও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করে প্রতিবেশী ফ্রান্স। তবে তাদের নিজস্ব পুলিশ বাহিনী রয়েছে, যারা রাষ্ট্রের দৈনন্দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি নির্ভর করে সুইস গার্ড বাহিনীর ওপর, যারা অভ্যন্তরীণ সুরক্ষায় নিয়োজিত। বৃহত্তর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব বহন করে ইতালি। ফলে সেনাবাহিনী ছাড়াই উভয় দেশ নিরাপত্তা বজায় রাখতে সক্ষম।
কীভাবে এসব দেশ নিরাপদ থাকে
সেনাহীন এই দেশগুলোর নিরাপত্তার মূল ভরসা হল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা চুক্তি। তারা ন্যাটো কিংবা প্রতিবেশী শক্তিশালী রাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতার মাধ্যমে নিজেদের সুরক্ষিত রাখে। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, উপকূলরক্ষী কিংবা সীমান্তরক্ষী বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই দেশগুলো প্রমাণ করেছে, সেনাবাহিনী ছাড়া থেকেও রাষ্ট্র নিরাপদ থাকতে পারে। বরং সামরিক ব্যয় বাঁচিয়ে সেই অর্থ জনগণের কল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়। তাদের এই পদক্ষেপ দেখিয়ে দিয়েছে—একটি দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবসময় সেনাবাহিনী অপরিহার্য নয়, বরং কার্যকর নীতি, শক্তিশালী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাই হতে পারে মূল ভিত্তি। এভাবেই কোস্টারিকা, আইসল্যান্ড, পানামা, মোনাকো ও ভ্যাটিকান সিটির মতো দেশগুলো আজ বিশ্বে সেনাহীন থেকেও শান্তি ও উন্নয়নের অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
