আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান। সম্প্রতি সে দেশের সরকার একটি রিপোর্টে দাবি করেছিল, নানকাই ট্রফ বা নানকাই ভূতাত্ত্বিক খাত বরাবর ‘মহাভূমিকম্প’-এর ফলে কাঁপতে পারে জাপানের বিস্তীর্ণ এলাকা।
জাপানি মাঙ্গা শিল্পী রিও তাতসুকির ভবিষ্যদ্বাণীও একই রকম প্রায়। তাঁকে কখনও কখনও 'নতুন বাবা ভাঙ্গা' বলা হয়। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ৫ জুলাই, ২০২৫-এ ভয়ানক ভূমিকম্প হবে জাপানে। তাতসুকির ভবিষ্যদ্বাণী কি সত্যি প্রমাণিত হতে চলেছে? আশ্চর্যজনকভাবে, তিনি যে জায়গার কথা তিনি বলেছিলেন ঠিক সেখানেই গত ২ জুন মাউন্ট শিনমোয়েডাকে আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা আগ্নেয়গিরি ছাই এবং ধুলোয় ঢেকে গিয়েছে। এর ঠিক একদিন আগেই টোকারা দ্বীপপুঞ্জে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল। রিখটার স্কেলে যার তীব্রতা ছিল ৫.৫।
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত রিও তাতসুকির "দ্য ফিউচার আই স" বইয়ে এই ভয়াবহ ভবিষ্যতের কথা লেখা রয়েছে। অনেকেই এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে বলেছেন, জাপান এবং ফিলিপাইনের মধ্যে সমুদ্রের তলদেশে বিভক্তির ফলে সুনামি বা ভূমিকম্প হতে পারে। এই ভয়াবহ ভূমিকম্পকে ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামির সাথে তুলনা করা হচ্ছে। তবে এটি এর চেয়েও ভয়াবহ হতে পারে। কারণ এই ভূমিকম্প রিখটার স্কেলে ৮ থেকে ৯ মাত্রার বা তার বেশি হতে পারে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। জাপান আবহাওয়া সংস্থা (জেএমএ) এই সতর্কতা জারি করেছে।
নানকাই ভূতাত্ত্বিক খাতের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। টোকিয়োর পশ্চিমে শিজুয়োকা থেকে দক্ষিণে কিয়ুশু দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে সেটি। এই খাত আসলে দু’টি টেকটনিক পাতের সংযোগস্থল। জাপান যে পাতের উপর রয়েছে, ক্রমে তার নীচে প্রবেশ করছে ফিলিপাইন সাগর টেকটনিক পাত। বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির মধ্যে একটি। শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্মাণ নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের বসবাস দেশটিতে। প্রতিবছর গড়পড়তা দেড় হাজার কম্পন অনুভূত হয় জাপানে।
সাম্প্রতিক সময় জাপানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ২০১১ সালে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সুনামির উৎপত্তি হয়েছিল। সেই বিপর্যয়ে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বিপুল। ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যা কি না চেরনোবিলের বিপর্যয়ের পর বিশ্বে সবচেয়ে বড় পরমাণু বিপর্যয় ছিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৬.৯ ট্রিলিয়ন ইয়েন (১১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ২০২৪ সালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৪ জনের মৃত্যুর পর প্রথম মহাকম্প নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল জাপান সরকার। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে এই বিপর্যয়ের ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।
