আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাশ্মীরের অবৈধভাবে অধিকৃত এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ভারত জাতিসংঘে কড়া বার্তা দিয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের জাতিসংঘ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি ভাবিকা মনগালানন্দন বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা কাশ্মীরের অবৈধভাবে অধিকৃত অঞ্চলে বহু নিরপরাধ নাগরিককে হত্যা করেছে, যারা কেবল তাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার দাবিতে প্রতিবাদ করছিল।”


তিনি বলেন, “আমরা পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, তারা যেন অবিলম্বে কাশ্মীরের অবৈধভাবে অধিকৃত অংশে চলা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করে। সেখানে জনগণ পাকিস্তানের সামরিক দখল, দমননীতি, বর্বরতা এবং অবৈধ সম্পদ শোষণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহে নেমেছে।”


মনগালানন্দন পাকিস্তানের কূটনীতিকদের জাতিসংঘের বিভিন্ন আলোচনায় ভারতের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে “অসত্য ও বিদ্বেষমূলক” বক্তব্য দেওয়ার প্রবণতাকে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান যতবারই মিথ্যা অভিযোগ করুক, সেই পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই বাস্তবতা বা সত্য পরিবর্তন করতে পারে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “পাকিস্তানের দ্বিচারিতা ও ভণ্ডামি এই সম্মানিত মঞ্চের সময় ও মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য নয়।”


ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, “কাশ্মীরের জনগণ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারতের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করেছে। আমরা পাকিস্তানের সেই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করি, যেখানে তারা ভারতের জনগণকে বা জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তকে হেয় করার চেষ্টা করছে।” তিনি উল্লেখ করেন, “কাশ্মীরের মানুষ আজ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে, যা সবার চোখের সামনেই দৃশ্যমান।”


পাকিস্তান প্রায়ই দাবি করে যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মীরে গণভোটের কথা বলেছিল। কিন্তু বাস্তবে, ১৯৪৮ সালের ৪৭ নম্বর প্রস্তাবে পরিষদ পাকিস্তানকে প্রথমে তাদের সেনা ও নাগরিকদের কাশ্মীর থেকে প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিল।


ভাবিকা মনগালানন্দন বলেন, “পাকিস্তান আজও সেই নির্দেশ অমান্য করে কাশ্মীরের একটি অংশ দখল করে রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ ভারতের অবিচ্ছেদ্য এবং অখণ্ড অঙ্গ ছিল, আছে ও থাকবে।”


ভারত সবসময় মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, যা মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল দর্শন থেকেই উদ্ভূত—অহিংসা ও সমতার আদর্শ। মনগালানন্দন বলেন, “গান্ধীর এই ঐতিহ্য আমাদের সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছে। ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষার কাঠামো সময়ের সঙ্গে আরও শক্তিশালী হয়েছে।” তিনি জানান, ভারত সরকার ক্রমাগত অগ্রগামী আইন ও কর্মসূচি চালু করেছে যাতে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে। একইসঙ্গে, দেশের বিচারব্যবস্থা মানবাধিকারের পরিধি প্রসারিত করেছে, এবং জাতীয় ও রাজ্যস্তরের মানবাধিকার কমিশনসমূহ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।


জাতিসংঘে ভারতের এই বক্তব্য ছিল পাকিস্তানের তথাকথিত মানবাধিকার প্রচারণার মুখোশ উন্মোচন করার এক দৃঢ় প্রচেষ্টা। ভারতের কূটনৈতিক বার্তা স্পষ্ট — “কাশ্মীরে পাকিস্তানের দমননীতি বন্ধ করুন, কারণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সত্যের লড়াইয়ে ভারত দৃঢ়ভাবে অটল।”