আজকাল ওয়েবডেস্ক: সিআইএ-এর প্রাক্তন কর্মকর্তা ও পাকিস্তানে মার্কিন কাউন্টার-টেররিজম অপারেশনের প্রাক্তন প্রধান জন কিরিয়াকো সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির নেপথ্যের নানা গোপন অধ্যায় উন্মোচন করেছেন। তিনি প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, ওয়াশিংটন বহু মিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিয়ে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফকে “কিনে নিয়েছিল” এবং একসময় পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের নিয়ন্ত্রণও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে ছিল।
কিরিয়াকো বলেন, “আমরা মোশাররফকে কার্যত কিনে নিয়েছিলাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরশাসকদের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসে সেখানে গণমত, সংবাদমাধ্যম বা বিরোধিতার কোনও ঝামেলা নেই।” তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, মোশাররফের আমলে ওয়াশিংটন পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সামরিক কাঠামোয় প্রায় অবারিত প্রবেশাধিকার পেয়েছিল। “আমরা সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের নামে লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়েছি, আর মোশাররফ আমাদের যেটা চেয়েছি সেটাই করতে দিয়েছেন,”।
তবে তিনি এটাও বলেন যে মোশাররফ এক “দ্বিমুখী খেলা” খেলেছিলেন — প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সেজে, গোপনে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন। “পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য ছিল ভারত, আল-কায়েদা নয়। মোশাররফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেখিয়েছিলেন যে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, অথচ বাস্তবে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালাচ্ছিলেন” ।
#WATCH | On the question of fear of nuclear weapons falling into terrorists' hands in Pakistan, ex-CIA Officer, John Kiriakou says, "When I was stationed in Pakistan in 2002, I was told unofficially that the Pentagon controlled the Pakistani nuclear arsenal, and that Parvez… pic.twitter.com/iaKPpixhMZ
— ANI (@ANI)Tweet by @ANI
তিনি আরও এক বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেন। পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী আব্দুল কাদের খানকে হত্যা বা অপসারণের মার্কিন পরিকল্পনা সৌদি হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমরা চাইলে ইজরায়েলি ধাঁচে কাজটা করতে পারতাম। তাকে খুঁজে বের করা কঠিন ছিল না। কিন্তু সৌদিরা এসে বলল, ‘তাকে ছেড়ে দিন, আমরা তার সঙ্গে কাজ করছি।’ এরপর হোয়াইট হাউস থেকে নির্দেশ আসে, সিআইএ বা আইএইএ কেউই তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেবে না” ।
তাঁর মতে, এটি ছিল মার্কিন প্রশাসনের একটি গুরুতর কূটনৈতিক ভুল, যা সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা প্রায়ই ভাবতাম, সৌদিরাও কি নিজেদের পারমাণবিক ক্ষমতা গড়ে তুলছে?”। কিরিয়াকো সাম্প্রতিক সৌদি-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “হয়তো এখন সৌদিরা তাদের পুরনো বিনিয়োগের ফল চাইছে।”
আরও পড়ুন: সম্পূর্ণ অ্যাপ-ভিত্তিক টিকিটিং ব্যবস্থার পথে কলকাতা মেট্রো, যাত্রীদের হাতে শুধু মোবাইলই
প্রাক্তন এই সিআইএ কর্মকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের “বাছাই করা নৈতিকতা”কেও তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা নিজেদের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের আলোকস্তম্ভ বলে দেখাতে ভালোবাসি, কিন্তু সত্যিটা হল আমরা প্রতিদিন নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করি।”
সৌদি-মার্কিন সম্পর্ক প্রসঙ্গে কিরিয়াকো বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সেখানে সম্পূর্ণ লেনদেনভিত্তিক। আমরা তাদের কাছ থেকে তেল কিনি, তারা আমাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনে।” তিনি মনে করেন, সৌদিতে এক প্রহরী তাকে একবার বলেছিল, “তোমরা ভাড়াটে সৈন্য, আমরা টাকা দিয়ে তোমাদের এনেছি আমাদের রক্ষা করতে।”
কিরিয়াকো সাক্ষাৎকারে শেষ মন্তব্যে বলেন, বিশ্বের শক্তির ভারসাম্য এখন বদলাচ্ছে। চীন, ভারত ও সৌদি আরব নিজেদের কৌশলগত অবস্থান নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে, এবং মার্কিন প্রভাব সেই তুলনায় কমে যাচ্ছে। তাঁর মতে, আগামী বছরগুলো দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ক্ষমতার অধ্যায়ের সূচনা ঘটাতে পারে।
