আজকাল ওয়েবডেস্ক:  জীবনের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন প্রায় সবকিছুতেই। কোষ মেরামত থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ পর্যন্ত। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই প্রশ্ন করে আসছেন, জটিল সেলুলার যন্ত্রপাতি তৈরির আগেই কীভাবে প্রথম প্রোটিনগুলোর সৃষ্টি হয়েছিল। একটি নতুন গবেষণায় জানানো হয়েছে, জলের সাথে মানানসই একটি সহজ রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রাচীন উপাদানগুলোকে একত্রিত করে প্রোটিন তৈরির প্রথম ধাপ তৈরি করতে সক্ষম।


এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন প্রফেসর ম্যাথিউ পাওনার, যাঁর ল্যাব মূলত প্রিবায়োটিক কেমিস্ট্রি নিয়ে কাজ করে।গবেষকরা লিখেছেন: “জীবনের কার্যকরী কেন্দ্রে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিনের মধ্যে এক জটিল ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু এর উত্স এখনো রহস্যময়।” তাঁরা দেখিয়েছেন, RNA—যা জেনেটিক তথ্য সংরক্ষণ ও স্থানান্তর করে এবং বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে তা অ্যামিনো অ্যাসিডের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হতে পারে। অ্যামিনো অ্যাসিড হল প্রোটিন গঠনের মূল উপাদান, এবং এই সংযোগ জলেই, এনজাইম ছাড়াই, মৃদু অবস্থায় সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন: ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন, ভারতীয় রেল আপনাকে দেবে ২০ শতাংশ ছাড়, কীভাবে


বিজ্ঞানীরা অ্যামিনো অ্যাসিডকে এমন এক সক্রিয় রূপে রূপান্তর করেছেন যা অতিরিক্ত শক্তি ধরে রাখে। এরপর এই সক্রিয় অ্যামিনো অ্যাসিড RNA-র নির্দিষ্ট স্থানে যুক্ত হয়। ডাবল-স্ট্র্যান্ডেড RNA-র প্রান্তে বিক্রিয়াটি বেশি কার্যকর হয়, ফলে এলোমেলো সংযোগ তৈরি হয় না। কিছু ক্ষেত্রে বেশ উচ্চ ফলন পাওয়া গেছে—যেমন আর্জিনিন ও অ্যাডেনোসিন যুক্ত হওয়ার সাফল্য ছিল প্রায় ৭৬ শতাংশ। গবেষকরা থিওএস্টার ব্যবহার করেছেন, কারণ এগুলো জলে সহজে ভেঙে যায় না এবং প্রোটিন-সম্পর্কিত রাসায়নিক বিক্রিয়াকে চালিত করতে পারে।


আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্যান্থেথিন যা আজকের জীবকোষে Coenzyme A-এর সক্রিয় অংশ—তা প্রিবায়োটিক অবস্থায় জলের মধ্যেই তৈরি হতে পারে। নতুন ফলাফল সেই একই সালফার-ভিত্তিক রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে RNA ও অ্যামিনো অ্যাসিড সংযোগের সাথে যুক্ত করছে।


পেপটাইড হল ২ থেকে ৫০ অ্যামিনো অ্যাসিডের শৃঙ্খল, আর এর চেয়ে বড় ও ভাঁজকৃত শৃঙ্খলই প্রোটিন। পেপটিডাইল RNA তৈরি হওয়া মানে RNA যুক্ত অ্যামিনো অ্যাসিডগুলোকে দীর্ঘ শৃঙ্খলে প্রসারিত করা সম্ভব হয়েছে যা প্রোটিনের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।


ড. জ্যোতি সিংহ বলেন, “এই গবেষণার সবচেয়ে বড় দিক হল ব্যবহৃত সক্রিয় অ্যামিনো অ্যাসিড আসলে একটি থিওএস্টার, যা Coenzyme A থেকে তৈরি—এবং এটি প্রতিটি জীবকোষেই পাওয়া যায়। আবিষ্কারটি বিপাকক্রিয়া, জেনেটিক কোড ও প্রোটিন গঠনের মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ তৈরি করতে পারে।” এই বিক্রিয়াটি জলেই, নিরপেক্ষ pH অবস্থায় কাজ করে। অর্থাৎ, সমুদ্রের গভীর জলের বদলে ছোট পুকুর, হ্রদ বা ভেজা তটরেখা এই ধরনের প্রক্রিয়ার জন্য বেশি উপযোগী ছিল।


হিমায়িত পরিবেশও সাহায্য করেছে। প্রায় -৭° সেলসিয়াসে (১৯°F) বরফ জমার সময় লবণকে বাইরে ঠেলে দিয়ে দ্রবণগুলোকে ঘন করে তোলে, ফলে বিক্রিয়া দ্রুত হয়।


আজকের কোষে প্রোটিন তৈরি হয় রাইবোজোম নামক জটিল রাইবোনিউক্লিওপ্রোটিন মেশিনের মাধ্যমে, যা mRNA পড়ে ও tRNA-র সাহায্যে অ্যামিনো অ্যাসিডকে জোড়া দেয়। কিন্তু এই নতুন কেমিস্ট্রি দেখাচ্ছে, প্রোটিন ছাড়াই RNA নিজে অ্যামিনো অ্যাসিড সামলাতে পারে—যা চিকেন-অর-এগ সমস্যা অনেকটাই দূর করছে। এর আগে এক গবেষণায় RNA-পেপটাইড বিশ্ব-এর ধারণা দেওয়া হয়েছিল, যেখানে RNA ও ছোট পেপটাইড একসাথে বিবর্তিত হয়েছিল। বর্তমান আবিষ্কার প্রমাণ করছে, জলীয় পরিবেশেই RNA কার্যকরভাবে অ্যামিনো অ্যাসিড সংগ্রহ ও প্রসারিত করতে সক্ষম ছিল।