আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ভারতের সঙ্গে ফের একবার নিজের বন্ধুত্ব প্রমাণ করার দিকে জোর দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ করা “সহজ কাজ নয়” কারণ এটি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে।


শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “দেখুন, ভারত ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমি ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছি, কারণ তারা রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। এটা কোনও সহজ ব্যাপার নয়। এটি বড় একটি পদক্ষেপ, আর এতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমি ইতিমধ্যেই অনেক কিছু করেছি। আর মনে রাখবেন, এটা ইউরোপের সমস্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।”

আরও পড়ুন:  বদলে গেল সোনার দাম, কলকাতায় সোনার দাম নিয়ে চিন্তায় ব্যবসায়ীরাও


ট্রাম্প ফের একবার নিজের কাজের তারিফ করতে গিয়ে বলেন, “আমি সাতটা যুদ্ধ সমাধান করেছি। আমি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যেকার উত্তেজনাসহ অনেক কিছু সমাধান করেছি। যেগুলো অসম্ভব মনে করা হত যেমন কঙ্গো আর রুয়ান্ডা। আমি তা সমাধান করেছি। এটি ৩১ বছর ধরে চলছিল, লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। আমি এমন যুদ্ধও শেষ করেছি, যেগুলোকে বলা হত সমাধান অযোগ্য।”


এদিকে, ভারত তাদের রুশ তেল কেনা নিয়ে অবস্থান রক্ষা করে বলেছে যে দেশের জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত সর্বদা জাতীয় স্বার্থ এবং বাজারের বাস্তবতাকে কেন্দ্র করেই নেওয়া হয়। এর আগে, ভারতের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের মনোনীত পরবর্তী রাষ্ট্রদূত সার্জিও গর বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে বলেন, মার্কিন প্রশাসন চায় ভারত আমেরিকান অপরিশোধিত তেল এবং তেলজাত পণ্য কিনুক। তিনি উল্লেখ করেন, চলতি বাণিজ্য আলোচনাগুলোও মূলত সেই দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।


গর জোর দিয়ে বলেন, ভারতের ১৪০ কোটিরও বেশি জনগণ এবং দ্রুত সম্প্রসারিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করছে। অন্যদিকে, এর একদিন আগে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এক সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত দেন যে, ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত এগোতে পারে, যদি নয়াদিল্লি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করে। লুটনিক বলেন, “আসলে আমরা ভারতের ব্যাপারটা সমাধান করব, সেখানে বিশেষ কোনও সমস্যা হবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভর করছে ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করছে কিনা তার ওপর।


বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। আমেরিকার সঙ্গে প্রতি বছর ভারতের ১৬ লক্ষ কোটি টাকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চলে। কিন্তু সম্প্রতি ট্রাম্প চড়া শুল্ক আরোপ করায় সেই বাণিজ্য ধাক্কা খেয়েছে। বাতিল হয়ে গিয়েছে বহু বরাত। আমেরিকার বিকল্প হিসাবে অন্য দেশের বাজার খুঁজতে শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধের বিষয়ে নয়াদিল্লি অবস্থানে অনড়।


এই মুহূর্তে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার তেল কেনা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখার জন্য পুতিনের দেশ তেলের দামে অনেক বেশি ছাড় দিতে শুরু করে তখন থেকে। আমেরিকার বক্তব্য, ভারত তেল কিনছে বলেই ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছে রাশিয়া। ভারতের তেল কেনার টাকা তাদের যুদ্ধে অর্থের জোগান দিচ্ছে।

 পরোক্ষে ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং প্রাণহানির জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে। কিন্তু ভারত সে সব দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তারা বাণিজ্যনীতি স্থির করে। আমেরিকাও যে রাশিয়ার কাছ থেকে বেশ কিছু পণ্য কেনে, তা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।