অনেক সময় হঠাৎ পায়ে ব্যথা, ফোলা বা অস্বস্তিকে আমরা সাধারণ ক্লান্তি বা মাংসপেশির টান ভেবে এড়িয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এগুলো কখনও কখনও পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার অর্থাৎ ব্লাড ক্লট বা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস (ডিভিটি)-র প্রাথমিক বিপদ সংকেত হতে পারে। যা সময় মতো শনাক্ত না হলে ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে, এমনকী প্রাণঘাতীও হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস মূলত পায়ের গভীর শিরায় রক্ত জমে শক্ত দলা তৈরি হলে হয়। এই জমাট রক্ত যদি ভেঙে গিয়ে রক্তপ্রবাহের সঙ্গে ফুসফুসে পৌঁছে যায়, তাহলে তৈরি হতে পারে পালমোনারি এম্বোলিজম, যা একটি জরুরি ও মারাত্মক শারীরিক অবস্থা।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পায়ে ব্লাড ক্লটের কিছু সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে, যেগুলি অনেকেই অবহেলা করেন। তার মধ্যে অন্যতম হল এক পায়ে হঠাৎ ব্যথা বা টান ধরা অনুভূতি, যা সাধারণত কাফ বা উরুর অংশে বেশি দেখা যায়। এই ব্যথা হাঁটলে বা দাঁড়ালে বাড়তে পারে এবং বিশ্রাম নিলেও পুরোপুরি কমে না।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল এক পায়ের অস্বাভাবিক ফোলা। অনেক সময় দেখা যায়, একটি পা অন্যটির তুলনায় স্পষ্টভাবে ফুলে আছে। সেই সঙ্গে আক্রান্ত জায়গায় গরম ভাব বা উষ্ণতা অনুভূত হতে পারে। এছাড়া পায়ের ত্বকের রঙে পরিবর্তন, লালচে, নীলচে বা কালচে হয়ে যাওয়াও রক্ত জমাট বাঁধার ইঙ্গিত দিতে পারে।
কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা বলেন, পা খুব ভারী লাগছে বা ভেতরে চাপ অনুভব হচ্ছে। কখনও আবার শিরাগুলো শক্ত ও স্পর্শকাতর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব রোগীর ক্ষেত্রে সব লক্ষণ একসঙ্গে দেখা যায় না। কারও ক্ষেত্রে মাত্র একটি বা দুটি উপসর্গই প্রথম সতর্কবার্তা হতে পারে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয় তখনই, যখন পায়ের এই উপসর্গগুলির সঙ্গে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, বুক ব্যথা, মাথা ঘোরা বা কাশি হলে রক্ত বেরোনোর মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এগুলো রক্ত জমাট ফুসফুসে পৌঁছনোর ইঙ্গিত দিতে পারে। এই অবস্থায় দেরি না করে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, টানা ঘুরে বেড়ানো, সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচার, গর্ভাবস্থা, ধূমপান, স্থূলতা বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে পায়ে ব্লাড ক্লটের ঝুঁকি বেশি থাকে।
পায়ের অস্বাভাবিক ব্যথা, ফোলা বা রং পরিবর্তনকে কখনওই হালকাভাবে নেবেন না। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার মতো মারাত্মক সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে সতর্কতাই পারে বড় বিপদ থেকে বাঁচাতে।
