আজকাল ওয়েবডেস্ক: নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) প্রক্রিয়ার পর প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় একাধিক ত্রুটি সামনে এসেছে। সেই ভুলের এক চাঞ্চল্যকর উদাহরণ উঠে এল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ও তাঁর পরিবারের ক্ষেত্রে। খসড়া তালিকায় সেলিমের পুত্র অতীশ আজিজের পদবির জায়গায় উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রচলিত ‘অবাস্তি’ পদবি যুক্ত হয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত, যখন কলকাতা পোর্ট বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার অতীশ আজিজ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর নিজের এবং পরিবারের নাম যাচাই করতে তালিকা স্ক্যান করেন। প্রথম নজরে তেমন অসঙ্গতি চোখে না পড়লেও, বিস্তারিতভাবে ভোটার তথ্য খতিয়ে দেখার সময় তিনি লক্ষ্য করেন, তাঁর নামের পদবির ঘরে ‘আজিজ’-এর বদলে ‘অবাস্তি’ লেখা রয়েছে। যদিও নামের অন্যান্য অংশ ইংরেজি ও বাংলায় সঠিক ছিল, পদবির এই পরিবর্তনই প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও যাচাই প্রক্রিয়া নিয়ে।

অতীশ জানান, প্রথমে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু পুনরায় খতিয়ে দেখার পর স্পষ্ট হয় যে এটি নিছক বানানগত ভুল নয়, বরং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি উত্তর ভারতীয় পদবি যুক্ত হয়ে গেছে। আরও আশ্চর্যের বিষয়, সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা মহম্মদ সেলিমের নামও তালিকায় আত্মীয়ের তালিকাভুক্ত অংশে ‘অবাস্তি’ পদবিসহ নথিভুক্ত হয়েছে, যদিও সেলিমের নিজের ভোটার বিবরণে কোনও ভুল নেই।

অতীশের অভিযোগ, গোটা প্রক্রিয়াটাই একটি নির্দিষ্ট 'এজেন্ডা' দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। তিনি বলেন,"আমি কলকাতায় থাকি, আমার বাবা এত বছরের সংসদ, মন্ত্রী ছিল তাতেই এই 'ভুল' এসেছে, যারা আমার মতো তথাকথিত 'প্রিভিলেজড' মানুষ নন তাদের সঙ্গে কী হচ্ছে সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এটা একটা বড়সড় পরিকাঠামোগত এবং পরিকল্পনাহীন প্রক্রিয়ার অংশ।"

উল্লেখ্য, ‘অবাস্তি’ পদবি মূলত উত্তর ভারতের, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণ সমাজে প্রচলিত। এই প্রেক্ষাপটে অতীশ আজিজ সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে লেখেন, “এখন দেখছি নির্বাচন কমিশন আমাকে ব্রাহ্মণ বানিয়ে দিয়েছে, সঙ্গে মহম্মদ সেলিমকেও।”

এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছেন মহম্মদ সেলিম। এক ইংরেজি দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য, “এ ধরনের গুরুতর সংশোধনী প্রক্রিয়াকে কমিশন অত্যন্ত হালকাভাবে নিয়েছে। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির অভাবেই এমন ভুল হচ্ছে। SIR-কে কার্যত প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে।”

অতীশ আজিজ জানান, ভুল সংশোধনের জন্য সিপিএমের বুথ-স্তরের এজেন্টদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। দলীয় সূত্রে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট বুথ লেভেল অফিসারের (BLO) মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফর্ম পূরণ করে নাম সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিকের দাবি, খসড়া ভোটার তালিকায় কোনও ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট ভোটার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুথ লেভেল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। অনলাইনে ফর্ম-৮ পূরণ করেও নাম বা বানান সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। যাচাই শেষে সংশোধিত তথ্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তিগত ভুল নয়, বরং বৃহত্তর প্রশাসনিক অবহেলার প্রতিফলন। নাগরিকত্ব ও ভোটাধিকার সংক্রান্ত নথিতে এমন ভুল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে।