আজকাল ওয়েবডেস্ক: হোয়াইট হাউসের অদূরে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর একজন আফগান নাগরিকের গুলিবর্ষণের ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় ধরনের নীতিগত ঘোষণা করলেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ’ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হবে, যাতে মার্কিন প্রশাসন ও অভিবাসন ব্যবস্থা “সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার হতে পারে।” এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এবং চাকরি, উচ্চশিক্ষা কিংবা রাজনৈতিক নির্যাতন থেকে বাঁচতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক কয়েক কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত হলেও বছরের পর বছর ঢিলেঢালা অভিবাসন নীতি সেই অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাঁর দাবি, “অভিবাসন নীতির কারণে মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান ক্ষয়ে গেছে এবং দেশটির অর্জিত আধুনিক অগ্রগতি ধীর হয়ে পড়েছে।”
ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে থামিয়ে দেব, যাতে মার্কিন ব্যবস্থাটি পুরোপুরি সেরে উঠতে পারে। বাইডেনের সময়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করা লাখো মানুষকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্পদ নয়, যারা আমাদের দেশকে ভালোবাসতে অক্ষম, যারা দেশের নিরাপত্তা বা উন্নতির জন্য হুমকি—তাদের জন্য এখানে কোনো জায়গা থাকবে না।”
https://truthsocial.com/@realDonaldTrump/posts/115625427648743414
তিনি আরও ঘোষণা করেন, দেশের কোনো বিদেশি নাগরিক যদি সরকারি ভাতা বা ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল হয়, কিংবা নিরাপত্তার সমস্যা হয়ে ওঠে, অথবা “পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ” হয়, তবে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এমনকি যেসব অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর “দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করছে”, তাঁদের নাগরিকত্বও বাতিলের হুমকি দেন তিনি।
ট্রাম্প দাবি করেন, এই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে “বেআইনি ও বিপজ্জনক জনসংখ্যার ব্যাপক কমানো”র লক্ষ্যে। তাঁর মতে, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে অটোপেনের মাধ্যমে যেসব “অননুমোদিত” অভিবাসন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকেও অবৈধ ধরা হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বের করে দেওয়া হবে।
তিনি আরও লেখেন, “এই পরিস্থিতির একমাত্র স্থায়ী সমাধান হলো রিভার্স মাইগ্রেশন—অর্থাৎ যারা এসেছে, তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়া। অন্য কোনো পদ্ধতি এই সংকট সমাধান করতে পারবে না।”
পোস্টের শেষে তিনি যুক্ত করেন, “ধন্যবাদজ্ঞাপন দিবসের শুভেচ্ছা জানাই—তবে তাদের না, যারা আমেরিকার মূল্যবোধ ঘৃণা করে, চুরি-ডাকাতি করে এবং সমাজ ধ্বংস করে। তাদের জন্য এখানে জায়গা নেই—তারা বেশিদিন এখানে থাকবে না!”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনবে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর লক্ষ লক্ষ মানুষ সরাসরি প্রভাবিত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নীতি বাস্তবায়িত হলে চাকরি, শিক্ষার সুযোগ, শরণার্থী সুরক্ষা ব্যবস্থা ও বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া সবকিছুই কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে।
এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এটি বিশ্বের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তবে ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন, দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের স্বার্থেই কড়াকড়ি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
বিশ্ব এখন অপেক্ষা করছে—ট্রাম্পের এই ঘোষণা নীতি হিসেবে কীভাবে বাস্তবায়িত হয় এবং তা আন্তর্জাতিক অভিবাসন ব্যবস্থায় কী প্রভাব ফেলে।
