আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে চিন এমন কিছু প্রকাশ করতে পারে যা আগে কেউ দেখেনি। একটি হিউম্যানয়েড রোবট, যা "গর্ভবতী" হতে পারে। তবে এটি জৈবিকভাবে নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ কার্যকর কৃত্রিম গর্ভাশয় ধারণ করার মাধ্যমে।


এটি কীভাবে কাজ করার কথা
এই কৃত্রিম গর্ভাশয়টি কোনও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়। এটি এমন একটি যন্ত্র যা মানুষের গর্ভের পরিবেশ অনুকরণ করে। এর মধ্যে থাকে কৃত্রিম অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড এবং একটি নালী যা নাড়ির মতো কাজ করে ভ্রূণকে পুষ্টি ও অক্সিজেন সরবরাহ করে। ২০১৭ সালে মার্কিন বিজ্ঞানীরা এই ধরনের “বায়োব্যাগে” অকালজাত মেষশাবকদের কয়েক সপ্তাহ জীবিত রাখতে পেরেছিলেন। তবে চিনা বিজ্ঞানী ড. ঝাং-এর দলের লক্ষ্য আরও উচ্চাভিলাষী। তাঁরা চান এই রোবট ভ্রূণকে ফার্টিলাইজেশন থেকে সম্পূর্ণ জন্ম পর্যন্ত বহন করুক। সম্পূর্ণ একটি মানবশিশুর জন্ম কোনও নারী শরীর ছাড়াই।

আরও পড়ুন: কমতে পারে গৃহঋণে সুদের হার, কোন সিদ্ধান্ত নিল দেশের প্রথম সারির ব্যাঙ্কগুলি


মূল্য ও প্রেক্ষাপট
এই ধরনের একটি "মেশিন গর্ভধারণ" প্রক্রিয়ার জন্য খরচ ধরা হচ্ছে প্রায় ১ লক্ষ ইউয়ান (প্রায় ১২ লক্ষ টাকা)। যেখানে মানব সারোগেসির খরচ অনেক বেশি সেখানে এটি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। চিনে বন্ধ্যত্ব দ্রুত বাড়ছে। ২০০৭ সালে প্রায় ১২% দম্পতি এতে ভুগছিলেন। ২০২০ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৮%। অনেকেই আইভিএফ এবং কৃত্রিম গর্ভধারণে হতাশ হন। ফলে কৃত্রিম গর্ভাশয় অনেকের জন্য এক সম্ভাব্য বিকল্প হয়ে উঠছে।


কেন এটি নিয়ে উদ্বেগ আছে?
সবাই এই প্রযুক্তিকে মুক্তির পথ হিসেবে দেখছেন না। সমালোচকরা বলছেন, মেশিনের মাধ্যমে গর্ভধারণ মাতৃত্বের সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে এবং পিতামাতার ধারণাকেই বিকৃত করে দিতে পারে। নারীবাদী চিন্তাবিদ আন্দ্রেয়া ডোয়ারকিন একবার বলেছিলেন, কৃত্রিম গর্ভাশয় হতে পারে "নারীর অবসানের সূচনা"। চিকিৎসকদের মধ্যেও উদ্বেগ আছে। ২০২২ সালে ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেন’স হসপিটালের গবেষকরা লিখেছিলেন এই ধরনের প্রযুক্তি গর্ভধারণকে একটি রোগ বা চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা হিসেবে দেখতে বাধ্য করতে পারে যা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে অমানবিক করে তোলে।


সম্ভাবনা বনাম বিপদ
কৃত্রিম গর্ভাশয় অনেক নারীর জন্য গর্ভধারণের ঝুঁকি কমাতে পারে এবং যেসব পরিবার সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম তাদের জন্য আশার আলো হতে পারে। কিন্তু একই সঙ্গে রয়েছে ঝুঁকিও।এরফলে সন্তান জন্ম দেওয়াকে পণ্যে পরিণত করা হতে পারে। মানবিক সম্পর্ক দুর্বল করতে পারে। প্রজনন ক্ষমতাকে মানবদেহ থেকে যন্ত্রে স্থানান্তরিত করতে পারে। 


২০২৬ সালের মধ্যে হয়তো আমরা এমন একটি শিশু দেখতে পারি যার জন্ম হয়েছে কোনও মায়ের গর্ভে নয়। একটি যন্ত্রের ভিতর থেকে। এই ঘটনা কি উন্নয়নের প্রতীক হবে না কি এক ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যতের পূর্বাভাস তা নির্ভর করবে আমরা কেমন সমাজ গড়ে তুলছি তার ওপর।