আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০২৫ সালের শুরুতে বাণিজ্যিক মৌপালকরা এমন চাক নিয়ে মাঠে নামেন, যা আমন্ড পরাগায়নের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা ছিল। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতেই তারা লক্ষ্য করলেন, মৌমাছির সংখ্যা দ্রুত কমছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে রিপোর্টে দেখা গেছে, মৌমাছির বিশাল ক্ষতি হচ্ছে এবং দ্রুত উত্তর খোঁজা জরুরি হয়ে উঠেছে।
শীতের শেষ দিকে মার্কিন কৃষি দপ্তর দলগুলো নমুনা সংগ্রহ করে এবং ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে। USDA-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত গ্রীষ্ম থেকে গড় ক্ষতি ৬০ শতাংশেরও বেশি, প্রায় ১৭ লাখ উপনিবেশ ধ্বংস হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৬০০ মিলিয়ন ডলার। USDA-র একটি প্রাক-প্রকাশিত গবেষণা দেখিয়েছে, মৌমাছিদের ভাইরাস সংক্রমণের তীব্র বৃদ্ধি এবং সেই ভাইরাস ছড়ানো পরজীবী মাইটের ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার কারণে এই বিপর্যয় ঘটেছে।
আরও পড়ুন: সুদের হার থাকছে ৮ শতাংশের বেশি, বিনিয়োগেই মিলবে সুফল
গবেষকরা জীবিত উপনিবেশের নমুনা ও অসুস্থ মৌমাছিদের আলাদা নমুনা পরীক্ষা করেন, এবং মাইটের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতার জিন চিহ্নিত করেন। মূল দায়ী ছিল Varroa destructor, একধরনের বহিঃপরজীবী মাইট যা মৌমাছির শরীরে লেগে রক্ত খায় এবং ভাইরাস ছড়ায়। মাইটের সংখ্যা বেড়ে গেলে ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে চাকের শ্রমিক মৌমাছিরা আগেভাগেই মারা যায় এবং নতুন মৌমাছি তাদের জায়গা নিতে পারে না। ল্যাবরেটরিতে দেখা গেছে, মৃতপ্রায় মৌমাছির শরীর থেকে নেওয়া ভাইরাস এমনকি অত্যন্ত মিশ্রিত অবস্থায়ও সুস্থ মৌমাছিকে মেরে ফেলতে পারে। এতে বোঝা যায়, ভাইরাসই উপনিবেশ ধ্বংসের শেষ ধাপ।
দুইটি ভাইরাস বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়েছে। ডিফর্মড উইং ভাইরাস এবং একিউট বি প্যারালাইসিস ভাইরাস। দুটোই একক-সুতো RNA ভাইরাস, যা নিয়ন্ত্রণহীন হলে মৌমাছির আয়ু কমিয়ে দেয় এবং নতুন প্রজন্ম তৈরি ব্যাহত করে। প্রধান গবেষক জ্যাকারি এস. লামাস, USDA-র বিই রিসার্চ ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী বলেন:“সব সংগ্রহ করা Varroa মাইটে মাইটনাশক প্রতিরোধ ক্ষমতা পাওয়া গেছে। নতুন নিয়ন্ত্রণ কৌশল বের করা এখন জরুরি।”
বছরের পর বছর ধরে অনেক মৌপালক অ্যামিট্রাজ নামক একটি কৃত্রিম কীটনাশকের উপর নির্ভর করেছেন মাইট দমনের জন্য। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, Varroa মাইটের মধ্যে এক ধরনের জিনগত পরিবর্তন হয়েছে, যা তাদের অ্যামিট্রাজ প্রতিরোধী করে তুলছে। এর ফলে কার্যকর নিয়ন্ত্রণের রাস্তা সংকুচিত হচ্ছে। মৌমাছি শুধুই বাণিজ্যিক পরাগায়নকারী নয়, তাদের ভাইরাস বন্য পরাগায়নকারীদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, DWV নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ভোমরা মৌমাছির শরীরেও প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। বড় পরিসরের মৌমাছি খামারে এই ঝুঁকি বাড়ে, যা প্রাকৃতিক পরিবেশের পরাগায়নের ভারসাম্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক ক্যালিফোর্নিয়ার আমন্ড মৌসুমে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পরাগায়ন কার্যক্রম। প্রতি বছর প্রায় ২৪ লাখ চাকের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে দেড় মিলিয়নেরও বেশি অন্যান্য রাজ্য থেকে আনা হয়। Varroa মাইট দ্রুত পূর্ণবয়স্ক কর্মী মৌমাছি এবং নতুন প্রজন্মের লার্ভার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সংখ্যক মাইটও ভাইরাস সংক্রমণের সূচনা করতে পারে, যা পরে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এক পর্যায়ে চাকের প্রবীণ মৌমাছিরা দ্রুত মারা যায়, কিন্তু নতুনরা যথাসময়ে জন্ম নিতে পারে না। ফলস্বরূপ উপনিবেশ ভেঙে পড়ে।
শুধু মাইট নয় কীটনাশকের প্রভাব, খাবারের অভাব, অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং পরিবহনজনিত চাপও মৌমাছির প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। সবগুলো চাপ মিলেই মৌমাছির আয়ু কমায় এবং নতুন প্রজন্ম তৈরিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। USDA গবেষক ড. জুডি চেন বলেন: “ভাইরাসই সম্ভবত মৌচাক ধ্বংসের শেষ ধাপ, তবে অন্যান্য পরিচিত চাপও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
বর্তমানে গবেষকরা নতুন মাইট প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ভাইরাসের সংমিশ্রণ চিহ্নিত করার জন্য মৌমাছি ও মাইট পরীক্ষা করছেন। একইসঙ্গে, নতুন রাসায়নিক ও অরাসায়নিক কৌশলও খোঁজা হচ্ছে, যা বাস্তব খামারে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে। সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল আগাম সতর্কতা। যদি মৌপালকরা শীতের আগে মাইট সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারেন, তবে মৌচাক ধ্বংসের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
