আজকাল ওয়েবডেস্ক:  মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও কৃষির ইতিহাসে ডালগাছ বা বীন উদ্ভিদ বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এগুলি শুধু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয়, বরং মাটিকেও উর্বর করে তোলে। প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক থিওফ্রাস্টাস যিনি উদ্ভিদবিদ্যার জনক হিসেবে পরিচিত, তাঁর গ্রন্থে লিখেছিলেন— “বীন গাছ মাটিকে কোনোভাবেই ক্লান্ত করে না, বরং ফুল ফোটার সময় সেটি মাটিকে সার জোগায়। তাই মেসিডোনিয়া ও থেসালির মানুষরা এই সময়ে মাটি উলটে দেয়।” অর্থাৎ, দুই হাজার বছরেরও আগে মানুষ বুঝে গিয়েছিল যে বীন গাছ প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে।


বীন ও এজাতীয় গাছের মূলের মধ্যে বিশেষ ধরণের ব্যাকটেরিয়া বাস করে। এরা বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন, যা সরাসরি গাছ ব্যবহার করতে পারে না, সেটিকে গাছের জন্য সহজলভ্য যৌগে রূপান্তর করে। একে বলা হয় নাইট্রোজেন ফিক্সেশন।


শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কৃষকরা এই প্রাকৃতিক কৌশল কাজে লাগিয়ে জমির উৎপাদনশীলতা বাড়িয়েছেন। আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন এই সহাবস্থান প্রযুক্তিকে অন্যান্য উদ্ভিদে ছড়িয়ে দিতে, যাতে ভুট্টা, গম বা ধানের মতো ফসলও মাটিকে উর্বর করতে পারে। তবে এটি সহজ কাজ নয়।

আরও পড়ুন: নবমীতে তাল কাটল মুষলধারে বৃষ্টি, বিকেল গড়াতেই আকাশ অন্ধকার, রইল বড় আপডেট


গবেষকদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল—এই সহাবস্থান আসলে কয়বার বিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে? যদি এটি একবারই জন্ম নিত, তবে পরবর্তীতে অসংখ্য প্রজাতি এক্ষমতা হারিয়েছে। অথবা, এটি বারবার আলাদাভাবে নতুন করে জন্ম নিয়েছে, যাকে বলা হয় কনভার্জেন্ট ইভোলিউশন।
সম্প্রতি ফ্লোরিডা মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি-সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন—গাছেরা মাটির নাইট্রোজেন-ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়াকে চিনতে যে কেমিক্যাল রিসেপ্টর ব্যবহার করে, সেটি অন্তত তিনবার আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ, একই ক্ষমতা তিনবার ভিন্ন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের শরীরে গড়ে উঠেছে।


এই ফলাফল দীর্ঘদিনের সেই তত্ত্বকে সমর্থন করে, যেখানে বলা হয়েছিল—বীন গাছ ও এর আত্মীয় প্রজাতিগুলি প্রায় ১০ কোটি বছর আগে এক দূরবর্তী পূর্বপুরুষ থেকে এই সহাবস্থানের প্রবণতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিল।


গবেষণার সহলেখক ও ফ্লোরিডা মিউজিয়ামের বিশিষ্ট অধ্যাপক ডগলাস সলটিস বলেন, “সম্ভবত তখন এক পূর্বপুরুষ থেকে এই প্রবণতা এসেছিল, তারপর বহুবার নতুন করে উৎপত্তি হয়েছে এবং আবার অনেকবার হারিয়েও গেছে। এই গবেষণা প্রথমবার দেখাল, একই গন্তব্যে পৌঁছাতে একাধিক রাস্তা আছে। নাইট্রোজেন-ফিক্সিং সহাবস্থানে পৌঁছানোরও বহু পথ রয়েছে।”


এই আবিষ্কার কেবল উদ্ভিদবিদ্যার ইতিহাসেই নয়, আধুনিক কৃষিতেও নতুন দিশা দেখাচ্ছে। যদি বিজ্ঞানীরা ডালগাছের মতো বৈশিষ্ট্য অন্য ফসলেও স্থানান্তর করতে পারেন, তবে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। এতে খরচও কমবে, পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে।


ডালগাছ ও নাইট্রোজেন-ফিক্সিং ব্যাকটেরিয়ার সম্পর্ক প্রমাণ করে—প্রকৃতির বিবর্তন বহুমুখী ও জটিল। কখনও একটি বৈশিষ্ট্য একবার গড়ে ওঠে, আবার কখনো তা বারবার আলাদাভাবে জন্ম নেয়। বীন গাছের কাহিনি আমাদের শুধু অতীত বোঝায় না, ভবিষ্যতের কৃষি প্রযুক্তির জন্যও এক বিপ্লবী সম্ভাবনা উন্মোচন করে।