আজকাল ওয়েবডেস্ক: বছরের শেষ প্রান্তে এসে বিশ্বজুড়ে ভাগ্যবিশ্বাসী ও জ্যোতিষশাস্ত্রে আগ্রহীরা ভবিষ্যতের খোঁজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ২০২৫ সালের মাত্র আড়াই মাস বাকি থাকতেই অনেকেই জানতে চাইছেন—আগামী বছরটি মানবজাতির জন্য কী বয়ে আনবে? কেউ কেউ ট্যারোট কার্ড বা হস্তরেখার সাহায্যে ভবিষ্যদ্বাণী জানতে চেষ্টা করছেন, আবার অনেকে মুখ ফিরিয়েছেন রহস্যময় ভবিষ্যদ্রষ্টা বাবা ভাঙ্গার দিকে।

বুলগেরিয়ার এই কিংবদন্তি মহিলা ভবিষ্যৎবক্তা জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন ছিলেন, তবুও তাঁর বলা বহু ভবিষ্যদ্বাণী নাকি অবিশ্বাস্যভাবে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। সোভিয়েত আমলে অনেক রাজনৈতিক নেতা পর্যন্ত নাকি তাঁর পরামর্শ নিতেন আন্তর্জাতিক সংঘাত ও যুদ্ধবিষয়ক সিদ্ধান্তের আগে।

বিগত বছরগুলোতে তাঁর অনেক ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে মিলেছে বলেও বিশ্বাসীদের দাবি। উদাহরণস্বরূপ, তিনি আগে থেকেই বলেছিলেন যে এই দশকের শুরুতে বিশ্বের কয়েকটি বড় শহর তীব্র খরার কবলে পড়বে। সত্যিই ২০২২ সালে ব্রিটেনের জুলাই মাস হয়েছিল ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে শুষ্ক। এমনকি ১৯৮৯ সালেই তিনি ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বলেও অনেকের বিশ্বাস।

আরও পড়ুন: মোদির ব্রিটেন সফরের পরেই ভারতে কমতে চলছে স্কচ হুইস্কির দাম!

এই কারণেই ২০২৬ সাল নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীগুলি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে আগ্রহ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। জানা গেছে, আসন্ন বছরটি মোটেও সহজ হতে যাচ্ছে না। বাবা ভাঙ্গার ২০২৬ সালের সবচেয়ে ইতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণী হলো—মানবজাতি নাকি প্রথমবারের মতো ভিনগ্রহবাসীর সংস্পর্শে আসবে। স্কাই হিস্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালের নভেম্বরে একটি বিশাল মহাকাশযান পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে বলে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

তাঁর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আসছে বছর ভয়াবহ ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত ও চরম আবহাওয়ার সম্মিলিত আঘাতে পৃথিবীর প্রায় ৮ শতাংশ স্থলভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে তিনি কোথায় এই বিপর্যয় ঘটবে, তা কখনও নির্দিষ্টভাবে জানাননি।

ভাঙ্গার একাধিক ভবিষ্যদ্বাণীতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির তীব্র অস্থিরতার কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাঁর অনুসারীদের দাবি, তিনি ২০২৬ সালে বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছিলেন, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি পরমাণু যুদ্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

যদিও ভাঙ্গার জীবিত অবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণা ছিল অচেনা, তবুও তিনি বলেছিলেন, বিজ্ঞানীরা এক সময় বুঝতে পারবেন যে তারা প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে “অতিরিক্ত দূর” চলে গেছেন। তাঁর অনুসারীরা মনে করেন, ২০২৬ সালেই এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী নৈতিক বিতর্ক দেখা দিতে পারে।

২০২৫ সালের ভবিষ্যদ্বাণীতে তিনি বিশ্ব  আর্থিক অস্থিরতার কথাও বলেছিলেন। সেই সংকট যে ২০২৬ সাল পর্যন্ত গড়াবে, তাও তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখ রয়েছে। আরেকটি চমকপ্রদ পূর্বাভাসে তিনি জানিয়েছিলেন, মানুষ ২০২৬ সালে শুক্র গ্রহ বা ‘মর্নিং স্টার’-এর দিকে নজর দেবে নতুন শক্তির উৎস খুঁজে পেতে। বিজ্ঞানীরা হয়তো এ সময় ওই গ্রহে শক্তি আহরণের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু করবেন।

ভাঙ্গার আরও বলেছিলেন, ২০৪৬ সালের মধ্যে চিকিৎসকরা সম্পূর্ণ কৃত্রিম বা সিনথেটিক অঙ্গ ব্যবহার করে জীবন বাঁচাতে পারবেন। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, এই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক রূপ হয়তো ২০২৬ সালেই বাস্তবে দেখা যেতে পারে।

সব মিলিয়ে, বাবা ভাঙ্গার ২০২৬ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীগুলি যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনি আতঙ্কজনকও। একদিকে ভিনগ্রহবাসীর আগমন বা বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সম্ভাবনা, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা—সব মিলিয়ে মানবজাতির সামনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ইঙ্গিতই যেন রেখে গেছেন এই রহস্যময় ভবিষ্যদ্রষ্টা।