আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার ছিল ইহুদিদের জন্য বছরের পবিত্রতম দিন। হিব্রু ভাষায় দিনটিকে বলে ‘ইয়োম কিপুর’। এই শুভ দিনেই ঘটে গেল অঘটন। ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টারে একটি উপাসনাগৃহে প্রার্থনার জন্য জমায়েত করেছিলেন ইহুদিরা। সেই সময় একটি গাড়ি হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে ভিড়ের মধ্যে। গাড়ি থেকে নেমে ভিড়ের মধ্যে এলোপাথাড়ি ছুরি চালাতে থাকেন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। সেই হামলায় দু’জনের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে উপস্থিত হলে পুলিশের গুলিতে ওই আততায়ীর মৃত্যু হয়। এই হামলায় জখম হয়েছেন আরও তিন জন। এই ঘটনার পর ইংল্যান্ডের প্রতিটি ইহুদি উপাসনা কেন্দ্রে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। হামলার খবর পেয়ে নির্ধারিত কর্মসূচি কাটছাঁট করে দেশে ফিরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার।
ম্যাঞ্চেস্টার পুলিশ এটিকে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের জানিয়েছে, আক্রমণকারী ৩৫ বছর বয়সী জিহাদ আল-শামি, সিরিয়ান বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ধারণা করা হচ্ছে যে সে খুব ছোটবেলায় ইংল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল এবং ২০০৬ সালে নাবালক অবস্থায় তাকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: 'ভারত অপমান সহ্য করবে না', মোদির প্রশংসা করে মার্কিন শুল্ক-চাপের বিরুদ্ধে সোচ্চার পুতিন
বৃহস্পতিবার সকালে হামলার বিষয়ে পুলিশকে জানানোর সাত মিনিট পর পুলিশ আল-শামিকে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ প্রধান স্যার স্টিফেন ওয়াটসন জানিয়েছেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ‘বিস্ফোরক ডিভাইসের মতো দেখতে একটি জ্যাকেট’ পরেছিল। তবে, বাহিনী পরে নিশ্চিত করেছে যে এটিতে কোনও বিস্ফোরক ছিল না।
পুলিশ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সন্ত্রাস দমন রেকর্ডের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আল-শামির নাম পাওয়া যায়নি এবং পিএ নিউজ অনুসারে, তাকে বর্তমান তদন্তাধীন বলে মনে করা হচ্ছে না। অন্যান্য তদন্তের রেকর্ডে কোথাও তাঁর নাম আছে কি না তা দেখার জন্য আরও তদন্ত চলছে।
গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ জানিয়েছে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, প্রস্তুতি এবং প্ররোচনার সন্দেহে আরও তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০ বছর বয়সী দুই পুরুষ এবং ৬০ বছর বয়সী একজন মহিলা।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার বলেছেন, “একজন জঘন্য ব্যক্তি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। ইহুদিদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে কারণ তাঁরা ইহুদি।” তিনি উল্লেখ করেছেন যে, “ইহুদি ভবন, উপাসনাগৃহ, এমনকি স্কুলগুলিতেও সুরক্ষা প্রয়োজন... কারণ এই স্থানগুলি যে কোনও সময় ইহুদি-বিরোধী ঘৃণার হুমকির মুখে পড়তে পারে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর ‘পলিটিক্যাল কমিউনিটি’র একটি বৈঠকে যোগ দিচে ডেনমার্কেপ কোপেনহেগেন শহরে ছিলেন স্টার্মার। ম্যাঞ্চেস্টারে হামলার খবর পেয়েই নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করে দেশে ফিরে আসেন। ফিরেই তিনি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি (কোবরা কমিটি)-র সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় চার্লসও।
ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহি এই ঘটনার নিন্দা করে বলেন, “ম্যাঞ্চেস্টারে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার পর ইংল্যান্ডের ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইজরায়েলও শোকাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমি [জাতিসংঘে] সতর্ক করেছিলাম: সন্ত্রাসবাদের সামনে দুর্বলতা কেবল আরও সন্ত্রাসবাদ ডেকে আনে। কেবল শক্তি এবং ঐক্যই এটিকে পরাজিত করতে পারে।”
