আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রাচীন মিশরের এক সমাধি থেকে উদ্ধার হওয়া ৩,০০০ বছরের পুরনো মধু আজও সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযোগী—এই চমকপ্রদ তথ্য তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষকে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা যখন একটি রাজকীয় সমাধি খনন করছিলেন, তখন তাঁরা একাধিক সিল করা মধুর পাত্র খুঁজে পান। দীর্ঘ তিন সহস্রাব্দ পার করেও সেই মধু আজও ঠিক আগের মতোই ঘন, সুগন্ধি ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত! এই ঘটনাই প্রমাণ করে—মধুই সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্য, যার প্রকৃত অর্থে কোনো "মেয়াদ ফুরানোর দিন" নেই। মধুর এমন দীর্ঘস্থায়ীত্বের পেছনে রয়েছে তার অসাধারণ রাসায়নিক গঠন। এতে জলের পরিমাণ খুবই কম এবং চিনির ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। সেই সঙ্গে এটি অ্যাসিডিক প্রকৃতির হওয়ায় কোনও ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক এতে জন্মাতে পারে না।

তার ওপর মৌমাছিরাও যোগ করে তাদের জাদু। তারা তাদের মুখে তৈরি ‘গ্লুকোজ অক্সিডেজ’ এনজাইমের মাধ্যমে মধুর মধ্যে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তৈরি করে, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এর ফলে মধুতে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা একপ্রকার নিঃশেষ হয়ে যায়। আর একবার যদি মধু প্রক্রিয়াজাত হয়ে সঠিকভাবে সিল করে রাখা যায়, তবে এটি বাতাস থেকেও আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে না। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মধু স্ফটিকাকারে জমে যেতে পারে, কিন্তু তাতেও তার পুষ্টিগুণ বা কার্যকারিতা একটুও কমে না—বরং রক্ষণাবস্থায় পাকা, ঘন ও পরিণত স্বাদে পরিণত হয়।

আরও পড়ুন: জুন মাসে ১৮৫টি ওষুধের ব্যাচ মানহীন: সিডিএসসিও ও রাজ্য পর্যায়ের নজরদারিতে গুরুতর ত্রুটি উদ্ঘাটিত

আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্রে বহু আগে থেকেই বলা হয়েছে—"যত পুরনো মধু, তত বেশি ওষুধি গুণে সমৃদ্ধ।" এক বছরের পুরনো মধু যেমন সর্দি-কাশিতে উপকারী, তেমনি পাঁচ বা দশ বছরের পুরনো মধু শ্বাসনালী, হজম ও প্রদাহ সংক্রান্ত সমস্যায় আরও কার্যকর। এমনকি কেউ কেউ বলেন, বিশ বছর বা তারও বেশি পুরনো মধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।

এই কারণেই অনেক জায়গায় পুরনো মধু সংগ্রহ করে রাখা হয় মূল্যবান ঔষধি সম্পদ হিসেবে। আজ যখন বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রাকৃতিক খাদ্যপণ্যে ভেজালের ছড়াছড়ি, তখন মধু তার প্রকৃত রূপে দাঁড়িয়ে আছে হাজার বছরের প্রাকৃতিক অলৌকিকতা হিসেবে। প্রাচীন মিশরের রাজাদের সমাধি থেকে আজকের আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্র পর্যন্ত—মধু এক অনন্য খাদ্য ও প্রতিকার, যার গুণমান কেবল টিকে থাকে না, সময়ের সঙ্গে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।