আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের গোঁদায় কর্মরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিপিন যাদব আত্মহত্যা করেছেন—এমনই করুণ ঘটনা সামনে এসেছে ২৫ নভেম্বর। মৃত্যুর আগে ক্যামেরাবন্দি এক বিবৃতিতে যাদব জানান, তাঁকে এসডিএম, বিডিও এবং লিপিকর্মী (লেখপাল) নিয়মিত চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “আমাকে জোর করে কিছু নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে বলছিল এবং তার বদলে অন্য নাম যুক্ত করার নির্দেশ দিচ্ছিল। না মানলে সাসপেনশন এবং পুলিশের ভয় দেখাচ্ছিলেন।”

বিপিন যাদব চলমান বিশেষ পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়ার (Special Intensive Revision বা SIR) অধীনে ভোটার তালিকা সংশোধন কাজের তদারকি করছিলেন। তাঁর পরিবার দাবি করেছে—তাঁকে বিশেষ করে অন্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির (OBC) ভোটারদের নাম বাদ দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল।

গোঁদা জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াঙ্কা নিরঞ্জন এক বিবৃতিতে জানান—এমন কোনও নির্দেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “কোনও সম্প্রদায় বা জাতির ভোটারদের বাদ দেওয়ার নির্দেশ প্রশাসনের কেউ দেয়নি।” একইসঙ্গে যাদবের মৃত্যুর তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি নিয়োগ করা হয়েছে।

শুধু বিপিন নন—একই দিনে প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূরের ফতেপুর জেলার ব্লক লেভেল অফিসারের (BLO) কাজ করা সুধীর কুমারও আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বিয়ের মাত্র এক দিন বাকি ছিল। পরিবারের বক্তব্য—কয়েকদিন আগে নির্ধারিত বৈঠকে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয় এবং পরে বাড়িতে গিয়ে কর্মকর্তারা হুমকি দেন। তাঁর বোন রোশনি জানান, “কর্মকর্তা বাড়িতে এসে অপমান করেন। এরপর সুধীর ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন… তারপর আর বাঁচতে চাননি।”

এমন অভিযোগ শুধু উত্তরপ্রদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট এবং কেরালা থেকেও BLO-দের উপর অসহনীয় চাপ, ভয়ভীতি এবং অতিরিক্ত কাজের অভিযোগ সামনে এসেছে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী—উত্তরপ্রদেশে অন্তত চারজন, মধ্যপ্রদেশে আটজন এবং রাজস্থানে চারজন BLO ইতিমধ্যে মারা গেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন এখনও কোনও মৃত্যুকে সরকারি ভাবে SIR-সংক্রান্ত চাপের ফল হিসেবে স্বীকার করেনি। BLO হিসেবে সাধারণত কম বেতনভুক্ত সরকারি কর্মীদের নিয়োগ করা হয়—যেমন পঞ্চায়েত সচিব, তেহসিল কর্মী, সহকারী শিক্ষক এবং আঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তবে চলতি SIR-এ অভিযোগ উঠছে—দায়িত্ব অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

বুলন্দশহরের এক বর্তমান BLO নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় বলেন—“এই কাজটিতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন। অনেক BLO এখনও সাধারণ কীপ্যাড ফোন ব্যবহার করেন, আর এখন তাঁদের বলা হচ্ছে শত শত ভোটারের ডেটা অ্যাপে আপলোড করতে।” তিনি জানান—ফর্ম বিলি করা, পূরণ করানো, সংগ্রহ করা এবং পরে ডেটা ডিজিটাল করা—সব মিলিয়ে কাজের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উপর রয়েছে সময়সীমা পূরণের অত্যধিক চাপ।

বিভিন্ন BLO-দের মৃত্যু সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক নবদীপ রিনওয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব মৃত BLO-দের পরিবারের জন্য ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। তিনি X-এ লিখেছেন—“এই মৃত্যুগুলি শুধুই সরকারি ব্যর্থতা নয়—এগুলি গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ। তৎক্ষণাৎ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।”

একদিকে প্রশাসন বলছে—কোনও চাপ ছিল না, কাজ “স্বাভাবিকভাবেই” চলছিল। অন্যদিকে BLO-দের মৃত্যু, অভিযোগ, ভিডিও বিবৃতি এবং পরিবারের বক্তব্য—বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে। চলতি SIR প্রক্রিয়া কি শুধু প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা ও প্রশিক্ষণের অভাব—নাকি এর আড়ালে রয়েছে ভোটার তালিকা বদলের সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চাপ? এখনো প্রশ্নগুলোর জবাব মেলেনি। তদন্ত চলছে—আর তার মধ্যেই ক্রমশ চাপ, অবসাদ ও মৃত্যু—BLO-দের দুশ্চিন্তায় পরিণত হচ্ছে এই নির্বাচন সংশোধন প্রক্রিয়া।