আজকাল ওয়েবডেস্ক: মৃত ব্যক্তির গণনা ফর্ম ব্যবহার করে ভোটার লিস্টে নাম তোলার চেষ্টা বাংলাদেশি যুবকের। ধরা পড়তেই পুলিশের হাতে তুলে দিল মৃত ব্যক্তির আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে হুগলির ডানকুনি পুরসভার ২০ নং ওয়ার্ডের মাথুরডাঙি এলাকায়।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে মারা যান মহসিন খান। সেই নামেই গণনা ফর্ম ফিলাপ করে জমা দেন বাংলাদেশি যুবক নাদিম। মৃত মহসিন খানের দাদা মাইদুল খান জানতে পারেন, মৃত ভাইয়ের নামে গণনা ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিয়েছেন বাংলাদেশি যুবক নাদিম এবং তা গ্রাহ্য করেছে নির্বাচন কমিশন। এর পরই এলাকায় শোরগোল পরে যায়।

অভিযুক্ত বাংলাদেশি যুবক নাদিমের দাবি, ১৫ বছর ধরে ডানকুনিতে বসবাস করছেন। চার হাজার টাকার বিনিময়ে এখানে ভোটার কার্ড তৈরি করেন এবং বর্তমানে এসআইআর প্রক্রিয়া চলার সময় মৃত মহসিনের নামে গণনা ফর্ম জোগাড় করেন টাকার বিনিময়ে এবং তা ফিলাপ করে নিজের ছবি লাগিয়ে জমাও দিয়েছেন।

ঘটনা জানাজানি হতেই বুধবার রাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় মাথুরডাঙি এলাকায়। বাংলাদেশি যুবক নাদিমকে আটকে রাখেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশে খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে আসে ডানকুনি থানার পুলিশ।
পুলিশ এসে নাদিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কীভাবে অন্য এক মৃত ব্যক্তির ভোটার কার্ড ব্যবহার করে এসআইআর তালিকায় নাম তোলার পরিকল্পনা করেছে সে, এর সঙ্গে কারা জড়িত নাদিমকে জিজ্ঞাসা করে জানার চেষ্টা চালাচ্ছে ডানকুনি থানার পুলিশ। 

পুলিশ জানিয়েছে, নথি জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবককে। নাদিম সর্দারকে ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগে রবিন চক্রবর্তী নামে আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।তার বাড়ি গোবরা শিবতলা এলাকায়। দু'জনকেই পাঠানো হল শ্রীরামপুর আদালতে। পুলিশ হেফাজত নিয়ে বাকি তদন্ত করবে পুলিশ। 

এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে হুগলির একাধিক গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গত সপ্তাহে। করিন্যা গ্রামের পর এবার পোতাগাছি। আবারও ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এল বলাগড় ব্লকে। ভোটার তালিকা থেকে নাম উধাও একটা বুথের প্রায় প্রত্যেক ভোটদাতার। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হুগলির বলাগড় ব্লকের পোতাগাছি গ্রামে। 

দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন প্রত্যেকেই। তবুও একটা বুথের প্রায় সকল ভোটারের নাম উধাও তালিকা থেকে। এসআইআর-এ নাম বাদ যাওয়ার আশঙ্কায় রীতিমতো আতঙ্কিত বাসিন্দারা। হুগলির বলাগড় বিধানসভার অন্তর্গত একতারপুর পঞ্চায়েতের পোতাগাছি গ্রামে প্রায় ৯০০ মানুষের নাম নেই ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে। অথচ তাঁরা তার আগে এবং পরে সমস্ত নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। 

বাদ পড়েছে পোতাগাছি গ্রামের প্রায় ৯০০ ভোটারের নাম। নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও, ইসি-র ওয়েবসাইটে তথ্য যাচাই করতে গেলে দেখা যাচ্ছে ২০০৩ সালের ভোটার লিস্টে তাঁদের নাম রয়েছে। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা বহু বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন। সকলের কাছেই রয়েছে আধার কার্ড। রেশন কার্ড। জমির দলিল ভোটার কার্ড ইত্যাদি সকল তথ্য। তবুও ২০০২ সালের লিস্টে নাম না থাকায় তাঁদের এসআইআর-এ নাম ওঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

যদিও ২০০২ সালের আগে এবং পরে তাঁরা ভোট দিয়ে এসেছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, 'আমরা এখানে জন্মেছি, বড় হয়েছি। কর দিয়েছি, ভোট দিয়েছি। আজ হঠাৎ করে জানানো হচ্ছে আমাদের নাম তালিকায় নেই শেষ এসআইআর-এ। তাহলে আমরা কারা? অথচ ওয়েবসাইট খুললে ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নাম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যেখানে নির্বাচন কমিশন বলেছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকাই চূড়ান্ত। আমরা কোনটা বিশ্বাস করব?' 

এর আগে বলাগড় ব্লকের বাকুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের করিন্যা গ্রামে প্রায় দেড় হাজার মানুষের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছিল। এবার একই ধরনের সমস্যায় নাজেহাল অবস্থা পোতাগাছির বাসিন্দাদের। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলার বেশ কিছু জায়গায় এ ধরনের বিভ্রাট ধরা পড়েছে, যা পরীক্ষা করে দেখছে নির্বাচন দপ্তর। 

ভোটারের নাম উধাও হওয়ার পর থেকে গ্রামের মানুষ প্রতিদিন ব্লক অফিসে ভিড় করছেন। কেউ আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন, কেউ আবার স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে যাচ্ছেন। ভোটার তালিকা নিবিড় সংশোধনের কাজ চলছে। যাঁদের নাম ভুলবশত বাদ পড়েছে, তাঁরা ফর্ম পূরণ করে আবেদন করুন। বৈধ ভোটারদের নাম অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা হবে। শুনানিতে উপস্থিত হয়ে নথি দেখিয়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি হবে ২০০২ এসআইআর-এ নাম না থাকলেও ভয়ের কিছু নেই।
ছবি পার্থ রাহা।