আজকাল ওয়েবডেস্ক: পরপর জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল হিমাচল প্রদেশ। বুধবার ভোররাত থেকে একাধিক ভূমিকম্পে দুলে উঠল হিমাচল প্রদেশের চাম্বা। যদিও কম্পনের মাত্রা মৃদু। ভারী বৃষ্টির মাঝেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একাধিকবার ভূমিকম্পের জেরে আতঙ্ক ছড়াল গোটা রাজ্যে। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আজ, বুধবার ভোর ৩টে বেজে ২৭ মিনিটে হিমাচল প্রদেশের চাম্বায় প্রথম কম্পনটি অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে প্রথম কম্পনের মাত্রা ছিল ৩.৩। এর কয়েক মিনিট পর দ্বিতীয় কম্পনটি অনুভূত হয়। ভোর ৪টে ৩৯ মিনিটে দ্বিতীয়বার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চাম্বা। রিখটার স্কেলে দ্বিতীয় কম্পনের মাত্রা ছিল ৪। 

ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি সূত্রে খবর, ভূমিকম্পের উৎসস্থল হিমাচল প্রদেশের চাম্বা। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে কম্পনের উৎপত্তিস্থল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে প্রথম কম্পনের উৎসস্থল। যদিও এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পের জেরে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। 

আরও পড়ুন:  কুয়োয় মৃত্যুফাঁদ! গিজগিজ করছে ঘিলুখেকো অ্যামিবা, নাবালিকার মৃত্যুর পরেই এই গ্রামে ভয়ে তটস্থ সকলে

একটানা ভারী বৃষ্টি। হড়পা বান ও মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত গোটা হিমাচল প্রদেশ। বেড়েই চলেছে মৃত্যুমিছিল। এখনও নিখোঁজ বহু বাসিন্দা। ভারী বৃষ্টির মাঝেই ভূমিকম্পের জেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। 

হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বর্ষার শুরু থেকেই হিমাচল প্রদেশে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগস্টেও দুর্ভোগ কমবে না‌। চলতি সপ্তাহ জুড়ে আবারও প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে জেলায় জেলায়। প্রায় সব জেলাতেই সতর্কতা জারি রয়েছে। 

এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে মৃত্যুমিছিল জারি রাজ্যে‌। দুর্যোগের ঘনঘটায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এহেন পরিস্থিতিতে হড়পা বান ও ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকদের জন্য আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। নদী, ঝর্ণার কাছে যেতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। রাজ্য ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী একটানা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। প্রবল বৃষ্টির মাঝে কখনও কখনও উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। জেলায় জেলায় মোতায়েন রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একাধিক টিম‌। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, হিমাচল প্রদেশ প্রশাসন জানিয়েছে, ২০ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত হিমাচল প্রদেশ জুড়ে ২৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভারী বৃষ্টির জেরে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩৩ জনের। বাকি ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে। 
হড়পা বানে ভেসে, মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে, ধসে চাপা পড়ে, জলে তলিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, গাছ চাপা পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাঁরা। 

কমবেশি সব জেলাতেই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পথ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে কুলু, মান্ডি, কিন্নরে। পাশাপাশি আরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সাধারণ মানুষ। 

প্রশাসনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, ১ হাজার ১০৪টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ৩৭টি দোকান ও কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বিদ্যুতের খুঁটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে প্রায় ১০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে মারা গেছে বহু গবাদিপশু। চাষের জমি, ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

এদিকে মৌসম ভবন জানিয়েছে, আজ, বুধবারেও হিমাচল প্রদেশের জেলায় জেলায় প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি রয়েছে। সিমলা, সোলান মান্ডি, সিরমুর, কাঙ্গরায়  সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জুলাইয়ের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে হিমাচল প্রদেশে। প্রতিবছর বর্ষায় ভোগান্তির চিত্র প্রকাশ্যে আসে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারান বহু মানুষ। চলতি বছরেও তার অন্যথা হল না‌।