আজকাল ওয়েবডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত কমিটির তত্ত্বাবধানে মথুরায় ঊনবিংশ শতকের বাঁকে বিহারি মন্দিরের তোষাখানা (রত্নভাণ্ডার)-র দরজা ফের খোলা হল। পাঁচ দশকের বেশি সময় পরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রত্নভাণ্ডারের দরজা খোলা হয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহের সংলগ্ন অবস্থিত তোষাখানাটি ১৯৭১ সালে শেষ বার খোলা হয়েছিল। শনিবার সেখান থেকে উদ্ধার হল? মন্দিরের একজন সদস্য বলেন, চকচকে সোনার কাঠি, রত্ন এবং মূল্যবান পাত্র, এবং সিঁদুর মাখানো রূপার কাঠির বেশ কয়েকটি টুকরো উদ্ধার করা হলেও সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনও নথিপত্র পাওয়া যায়নি। শনিবার মন্দিরের কিছু সদস্য শ্বাসকষ্ট বোধ করায় মন্দিরের ‘তেহখানা’ (বেসমেন্টে) প্রবেশ করেননি।

১৯৭১ সালের পর থেকেই রত্নভাণ্ডারের ভিতরে কী ছিল তা নিয়ে নানা গল্পগাথা ছড়িয়ে পড়ে। সুপ্রিম কোর্ট, ২০২৫ সালের আগস্টে মন্দিরের দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখাশোনা করার জন্য ইলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অশোক কুমারের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করেছিল। রবিবার দলটি দ্বিতীয়বার পরিদর্শন করে বেসমেন্টের ভিতরে যায়, কিন্তু সেখানে আর কিছুই পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন এক সদস্য।

আরও পড়ুন: ঘরোয়া অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা দম্পতির! উৎসবের মরশুমে শহরে এ কী বিপত্তি?

মন্দিরের পুরোহিত দীনেশ গোস্বামী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “একটি সোনার বিস্কুট এবং তিনটি রূপার বিস্কুটে সিঁদুর লাগানো রয়েছে। তোষাখানার একটি লম্বা বাক্স থেকে এগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিটি ধাতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৩-৪ ফুট। এছাড়াও, লাল এবং সবুজ রঙের কয়েকটি রত্নপাথর, মূল্যবান মুদ্রা এবং বিভিন্ন ধাতুর তৈরি বাসনপত্র পাওয়া গিয়েছে।”

মথুরার ডিএসপি (মথুরা সদর) সন্দীপ সিং তোষখানায় প্রবেশ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, গোটা উদ্ধারকাজের একটি ভিডিও করা হয়েছে এবং দরজা খোলার সময় কমিটির সদস্য এবং পুলিশ উপস্থিত ছিল। এডিএম (অর্থ ও রাজস্ব) পঙ্কজ কুমার ভার্মা জানিয়েছেন, ভল্টগুলি আবার সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলি প্যানেলের সামনে পেশ করা হবে।

তবে উদ্বেগের বিষয় হল, কোষাগারের ভিতরে থাকা বেশ কিছু সম্পত্তির নথি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। মন্দিরের ইতিহাসবিদরা বলছেন, ঊনবিংশ শতকের মন্দিরের নথিতে উল্লেখ আছে যে, তৎকালীন বেশ কয়েকটি রাজপরিবার কর্তৃক মন্দিরে দান করা দলিল, উপহারপত্র এবং জমির মালিকানার কাগজপত্র তোষখানায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল।

শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মামলার আবেদনকারী ধর্মীয় নেতা দীনেশ ফালাহারি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চিঠি লিখে মন্দিরে অব্যবস্থাপনা এবং মন্দিরের সম্পদের উধাও হওয়ার বিষয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। সেই চিঠিতে লেখা রয়েছে, “হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বছরের পর বছর ধরে দান করা হয়েছে। এখন সেই কাগজপত্রগুলি কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

এই তোষাখানাটি ১৮৬৪ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯২৬ এবং ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ আমলে দু’টি চুরির ঘটনা ঘটেছিল। যার পরে তোষাখানার দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালে শেষবার দরজা খোলা হয়েছিল ব্যাঙ্কে গয়না স্থানান্তর করার জন্য।

শনিবারের উদ্ধারকাজে কেবল কয়েকটি পিতলের পাত্র এবং কাঠের জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। অনেকেরই বিশ্বাস যে, তোষাখানায় বিরল সম্পদ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ময়ূর আকৃতির পান্নার মালা, রুপোর শেষনাগ, নবরত্ন-সহ একটি সোনার কলসি, ভরতপুর, কারাউলি এবং গ্বালিয়রের রাজকীয় উপহার, পুরানো জমির দলিল, সিল করা চিঠি এবং ঊনবিংশ শতকের মন্দিরের উপহার।

তোষখানার ভিতর থেকে তেমন কিছু উদ্ধার না হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দার হতাশ। প্যানেল সদস্য শৈলেন্দ্র গোস্বামী বলেন, “ওই জায়গায় তুমি সম্পদ পাবে না; যা আসে তা ঠাকুরজির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। নগদ অর্থ এবং অন্যান্য উপহার ব্যাঙ্ক জমা করা হয়।”