আজকাল ওয়েবডেস্ক: যেকোনো দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তার ফাইটার জেট বা যুদ্ধবিমান। আধুনিক যুগে আকাশসীমা রক্ষা, দ্রুত আক্রমণ, এবং বৈশ্বিক শক্তি প্রদর্শনের জন্য এই যুদ্ধবিমানগুলো অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে বিশাল সংখ্যক ফাইটার জেট তৈরি ও মোতায়েন করেছে। নিচে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের ফাইটার জেটের সংখ্যা ও তাদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হল।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – প্রায় ২,৫০০ ফাইটার জেট
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমান বহর রয়েছে। তাদের বাহিনীতে রয়েছে অত্যাধুনিক F-35 Lightning II, F-15 Eagle এবং F-22 Raptor-এর মতো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনী উভয়েই এই বিমানের ওপর নির্ভর করে প্রতিরক্ষা অভিযান পরিচালনা করে। এই দেশটি প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে তাদের বিমান প্রযুক্তি আপডেট রাখতে। F-35 যুদ্ধবিমানটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ জেট, যা শত্রুপক্ষের রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী শুধু প্রতিরক্ষার জন্যই নয়, বরং সারা পৃথিবীতে নিজেদের উপস্থিতি এবং সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যও এই বিশাল বিমান বহর ব্যবহার করে থাকে।


রাশিয়া – ১,৫০০-রও বেশি ফাইটার জেট
রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফাইটার জেট বহর পরিচালনা করে। তাদের বহরে রয়েছে MiG-29, Su-27, Su-30, Su-35 এবং সর্বাধুনিক Su-57 যুদ্ধবিমান। রাশিয়ার বিমানবাহিনী মূলত প্রতিরক্ষার ওপর জোর দেয়, তবে তারা দ্রুত মোতায়েনযোগ্য যুদ্ধবিমান তৈরিতেও বিশেষভাবে দক্ষ।
রাশিয়ার Su সিরিজের বিমানগুলো তাদের ম্যানুভারেবিলিটি বা গতিশীলতার জন্য বিখ্যাত, যা আকাশযুদ্ধে বড় সুবিধা দেয়। বর্তমানে দেশটি তাদের পুরোনো যুদ্ধবিমানগুলোকে আধুনিকীকরণ করছে এবং নতুন প্রজন্মের স্টেলথ প্রযুক্তি সংযোজন করছে, যাতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: সঙ্গীতশিল্পীদের মাথায় হাত, ভয় দেখাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কীভাবে


চীন – প্রায় ১,২০০ ফাইটার জেট
চীন গত এক দশকে তাদের বিমানবাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে চীনের বিমানবাহিনীতে রয়েছে J-10, J-11, J-16, এবং অত্যাধুনিক স্টেলথ যুদ্ধবিমান J-20 Mighty Dragon। চীন শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যেও তাদের বিমানবাহিনীকে দ্রুত আধুনিক করছে। দেশটি নিজস্ব প্রযুক্তিতে যুদ্ধবিমান উৎপাদনে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে, যাতে বিদেশি নির্ভরতা কমানো যায়। চীনের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিমানবাহিনী হওয়া।


ভারত – প্রায় ৯০০ ফাইটার জেট
ভারতের বিমানবাহিনী দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী। বর্তমানে ভারতের কাছে রয়েছে রাশিয়ান তৈরি Su-30MKI, MiG-29, ফরাসি Rafale, এবং দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি LCA Tejas যুদ্ধবিমান। ভারত ক্রমাগত তাদের যুদ্ধবিমান বহর সম্প্রসারণ করছে এবং দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দিচ্ছে, যাতে “Make in India” উদ্যোগের মাধ্যমে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলা যায়। ভবিষ্যতে ভারত উন্নত স্টেলথ ফাইটার প্রজন্মে প্রবেশের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।


ফ্রান্স – প্রায় ৩০০ ফাইটার জেট
ফ্রান্সের বিমানবাহিনী ছোট হলেও অত্যন্ত দক্ষ ও আধুনিক। তাদের প্রধান যুদ্ধবিমান হলো Dassault Rafale, যা বিশ্বের অন্যতম সফল মাল্টিরোল ফাইটার জেট। ফ্রান্স নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই বিমান তৈরি করে এবং ভারতসহ বহু দেশে রপ্তানি করে থাকে। ফরাসি বিমানবাহিনীর শক্তি শুধু প্রযুক্তিতে নয়, বরং তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতায়ও নিহিত।


এই দেশগুলো দেখিয়ে দিয়েছে যে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে আকাশসীমার দখল মানেই কৌশলগত শক্তি। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, স্টেলথ ডিজাইন, এবং দেশীয় উৎপাদন—এই তিনটি দিক আগামী দিনের যুদ্ধবিমানের প্রতিযোগিতায় নির্ধারক ভূমিকা রাখবে।