আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৭ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মরুকরণ ও খরার বিরুদ্ধে সংগ্রামের দিবস। এই উপলক্ষে উঠে আসছে ভারতের এক কঠিন বাস্তব—দেশের প্রায় ৩০% জমি মরুকরণের পথে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO)-র ২০২১ সালের প্রতিবেদন ও পরিবেশ মন্ত্রকের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে ব্যাপক জমির ক্ষয় ঘটছে। উদ্বেগজনকভাবে, হিমাচল প্রদেশ, লাদাখ, ত্রিপুরা ও উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য এলাকাগুলিও দ্রুত মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।

এই সংকটের মূলে শুধু প্রাকৃতিক কারণ নয়, কৃষি নীতির দীর্ঘমেয়াদি ভ্রান্তিও রয়েছে। সবুজ বিপ্লবের পর একচেটিয়া ধান ও গম চাষ, ভর্তুকিভিত্তিক রাসায়নিক সার ও সেচ-নির্ভর কৃষি মডেল আজকের ভূমি অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। এক কেজি ধান ফলাতে প্রয়োজন ৩,০০০ থেকে ৫,০০০ লিটার জল, যা ভূগর্ভস্থ জলস্তর ধসিয়ে দিচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে মিলেট ও ডালের গুরুত্ব নতুন করে সামনে এসেছে। জোয়ার, বাজরা, রাগির মতো মিলেট কম জলচাহিদাসম্পন্ন, খরা সহনশীল এবং মাটির ক্ষয় রোধে কার্যকর। ডাল যেমন উড়দ, কুলথি, ভট্ট—এরা মাটিতে নাইট্রোজেন সংযোজন করে সার ছাড়াই উর্বরতা বজায় রাখে।

উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য অঞ্চলে এই ডাল ও মিলেট চাষ ঐতিহ্যগতভাবে চালু ছিল। কিন্তু বাজার ও নীতিগত সহায়তার অভাবে তা প্রায় লুপ্ত। সরকারি ক্রয় ও পাবলিক ফুড সিস্টেমে এই ফসলের অন্তর্ভুক্তি, স্থানীয় প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, কমিউনিটি সিড ব্যাংক এবং সচেতনতা বাড়ানো—এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ না করলে এই হারিয়ে যাওয়া শস্য ও জ্ঞানব্যবস্থা আর ফিরবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু আন্তর্জাতিক বর্ষ পালনে নয়, বরং বাস্তব নীতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমেই মিলেট ও ডালকে দেশের কৃষি ও পুষ্টির ভবিষ্যৎ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। মরুকরণ ও পুষ্টিহীনতার দ্বৈত সঙ্কট থেকে মুক্তির রাস্তা হয়তো এই 'পুরনো শস্য'-র হাত ধরেই আসতে পারে।