আজকাল ওয়েবডেস্ক: নতুন এক প্রতিবেদনে বিহারের অভিবাসী শ্রমিকদের ভোটার তালিকা সংশোধন সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে 'স্ট্র্যান্ডেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক' (SWAN)। “For a Few Documents More” শিরোনামে এই রিপোর্টটি নির্বাচন কমিশনের সরকারি বিবৃতির বিপরীতে অভিজ্ঞতাভিত্তিক তথ্য হাজির করেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR)-এর মাধ্যমে ৬৪ লক্ষ ভোটারকে সম্ভাব্যভাবে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে ৩৫ লক্ষ ভোটারকে “অন্যত্র গমনকারী বা খুঁজে পাওয়া যায়নি” হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এই পটভূমিতে, SWAN বিহার থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া ৩৩৮ জন অভিবাসী শ্রমিকের উপর ১৯ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি জরিপ চালায়।

তথ্য পৌঁছায়নি পরিযায়ীদের কাছে

রিপোর্ট বলছে, বিহারের বাইরে থাকা ৯০% শ্রমিক এই সংশোধনের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। তাদের মধ্যে ৭৫% জানতেন না যে অনলাইনে ফর্ম জমা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে। এমনকি, ১% এরও কম শ্রমিক এই অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করেছেন। এক শ্রমিক প্রশ্ন তোলেন, “একটা ফর্ম না ভরলেই কি ভোট দিতে পারব না?” বৈশালীর ৪০ বছর বয়সী সুজিত রাম, যিনি এখন তামিলনাড়ুতে কাজ করছেন, বলেন, “বিহারে তো চাকরি নেই, তাই বাধ্য হয়ে বাইরে আসি। সরকার কি একবারও ভাবছে? এত তাড়াহুড়ো করে সব চাইলে চলবে কীভাবে?”

আরও পড়ুন: গুরগাঁওয়ে বাংলা ভাষাভাষী শ্রমিকদের উপর ধরপাকড়: ‘বাংলাদেশি’ অপবাদে আতঙ্ক, অধিকাংশ মুক্ত, তবুও অনিশ্চয়তার মেঘ

নথিপত্র এবং প্রক্রিয়ার জটিলতা

EC-র নির্ধারিত ১১টি প্রমাণপত্রের একটিও ছিল না এমন শ্রমিকের হার ৩৫%। যদিও ৯৬% শ্রমিকের আধার কার্ড এবং ৮৩% এর ভোটার আইডি ছিল—যা পরে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে গ্রহণযোগ্য বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। তথ্য সংগ্রহে অসংগতি দেখা গেছে। যেখানে অফিসিয়ালরা বাড়িতে এসেছিলেন, সেখানেও ২৯% ক্ষেত্রে ১১টি নির্ধারিত নথির একটির সাথে ফর্ম জমা নেওয়া হয়। অন্যদিকে, ৪৫% ক্ষেত্রে শুধু আধার বা ভোটার কার্ডের কপি নেওয়া হয়েছে। মুম্বইয়ে থাকা শ্রমিক সেলিম বলেন, “খবরে শুনেছিলাম অনেকের ফর্ম ছুড়ে ফেলা হচ্ছে। আমার আর আমার পরিবারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেলে আমরা ভীষণ সমস্যায় পড়ব—এই ভয়েই আমি মুম্বই থেকে বিহারে ফিরে এসেছি।”

আরও পড়ুন: “অবসরের পর কোনও সরকারি পদ নেব না”: সাফ জানালেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বি.আর. গাভাই

রিপোর্টের উপসংহার

SWAN জানায়, এই শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা আসলে নির্বাচন কমিশনের 'অদৃশ্য' ভোটারের শ্রেণীবিন্যাসকে অন্য আলোয় দেখায়—এরা নিখোঁজ নয়, বরং পরিযায়ী নাগরিক। একজন মুসলিম শ্রমিক জানান, “আমাদের বারবার প্রমাণ দিতে হয় আমরা কারা—যেন ফোন রিফ্রেশ করার মতো। কিন্তু নাগরিক অধিকার কি এতটাই সহজে কেড়ে নেওয়া যায়?”

রিপোর্টের শেষ মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ: “এই সংশোধন প্রক্রিয়া নাগরিকত্বের অনুমানকে উল্টে দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার হারানোর সম্ভাবনা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।” বিহারে এই মুহূর্তে ৩০ দিনের দাবি-আপত্তির সময়সীমা চলছে—যার ভবিষ্যৎ দেশব্যাপী ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক ন্যায়ের প্রশ্নে নজরকাড়া হয়ে উঠতে পারে।