আজকাল ওয়েবডেস্ক: এডিটরস গিল্ড একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিহারে সংবাদ পরিবেশনের জন্য বর্ষীয়ান সাংবাদিক অজিত অঞ্জুমের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এই এফআইআরটি ১৩ জুলাই বিহারের বালিয়া থানা এলাকায় নথিভুক্ত হয়। অঞ্জুম ১২ জুলাই তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে তিনি সাহেবপুর কামাল বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। “এই পরিদর্শনের পর মি. অঞ্জুমের প্রতিবেদনে সংশোধন প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়মের কথা উঠে আসে। তাঁকে এখন অভিযোগ করা হয়েছে ভোটার তালিকা সংশোধনে হস্তক্ষেপ, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কে দেওয়া এবং ভুয়ো তথ্য প্রচারের জন্য। একজন নির্বাচন আধিকারিকের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা এবং ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে,” – বলেছে এডিটরস গিল্ড ১৬ জুলাই (বুধবার) প্রকাশিত তাদের বিবৃতিতে।
অঞ্জুমের ইউটিউব ভিডিওতে দেখা যায়, বালিয়ায় কীভাবে বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া (SIR) চলছে এবং কীভাবে অনেক ফর্ম নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ছবি ও প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াই পূরণ ও আপলোড করা হচ্ছে। “ভারতীয় এডিটরস গিল্ড মি. অঞ্জুমের রিপোর্টের বিষয়বস্তু সঠিক না ভুল তা নিয়ে কোনো অবস্থান নিচ্ছে না। কিন্তু এটি যে একটি প্রকৃত সাংবাদিকতার অংশ বলেই মনে হয়, তার জন্য এফআইআর দায়ের করা অত্যুক্তি মনে হয়। কোনো সংবাদ প্রতিবেদনকে মোকাবিলার জন্য প্রশাসনের নানা উপায় আছে। কিন্তু সাংবাদিকতার অপরাধীকরণ এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক নয়,” – বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
“আমরা আশা করি যুক্তিবোধ কাজ করবে এবং সাংবাদিকরা – মি. অঞ্জুম সহ – তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধার সম্মুখীন হবেন না। সমস্ত পক্ষকে দায়িত্বশীল এবং সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিবেশ রক্ষা ও বিকাশে কাজ করতে হবে।” অঞ্জুমের ইউটিউব চ্যানেলে বর্তমানে ৭৫ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। এদিন বিবৃতিতে এডিটরস গিল্ড ফের উল্লেখ করেছে, “সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে পাল্টা বক্তব্য রাখতে প্রশাসনের কাছে অনেক বিকল্প আছে। কিন্তু সাংবাদিকতাকে ফৌজদারি আইনে ফেলা ও কড়া আইনি ধারা প্রয়োগ করা উচিত নয়।”
সোমবার, ডিজিপাব নিউজ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন (Digipub News India Foundation) – যা একটি স্বাধীন ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের সংগঠন – জানিয়েছে, অঞ্জুমের বিরুদ্ধে এফআইআর স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরাসরি আঘাত। “সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি অস্পষ্ট এবং এর ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের একেবারেই অযৌক্তিক,” – বলেছে সংগঠনটি। “ভিডিওতে তোলা প্রশ্নগুলির জবাব দেওয়ার বদলে নির্বাচন কমিশন এই এফআইআর দিয়ে শুধু অঞ্জুম নন, মাটির কাছাকাছি গিয়ে প্রতিবেদন করা সমস্ত স্বাধীন সাংবাদিকদেরই ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে,” – বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধনের ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ২৪ জুন। ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নাম না থাকা ব্যক্তিদের ভোটার হিসেবে যোগ হতে হলে উপযুক্ত নথিপত্র জমা দিতে হবে। এর ফলে রাজ্যের মোট ৭.৮ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ২.৯ কোটি – অর্থাৎ প্রায় ৩৭% – ভোটারকে নতুন করে প্রমাণ দিতে হবে। বিরোধী দলগুলির আশঙ্কা, এই বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় প্রায় ২.৫ কোটি ভোটার ভোটাধিকার হারাতে পারেন, কারণ তারা প্রয়োজনীয় নথি দিতে সক্ষম নাও হতে পারেন। অঞ্জুমের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারায় অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, আইনসম্মত আদেশ অমান্য, সরকারি কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া এবং ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই এফআইআরটি দায়ের করা হয়েছে বুথ-স্তরের আধিকারিক মহম্মদ আনসারুল হক-এর অভিযোগের ভিত্তিতে। বেগুসরাই জেলা প্রশাসনের অভিযোগ, অঞ্জুম, তাঁর সহকর্মীরা এবং একজন ক্যামেরাম্যান বুথে অনুমতি ছাড়াই ভিডিও রেকর্ডিং করেন। অঞ্জুম সোমবার দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে এক মুসলিম ব্লক-স্তরের আধিকারিককে “বলির পাঁঠা” বানানো হয়েছে। “ভিডিওতে তোলা প্রশ্নগুলির উত্তর না দিয়ে, প্রশাসন এখন আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে,” – বলেন অঞ্জুম সামাজিক মাধ্যমে। “আমি এখনই বেগুসরাইয়ে আছি। প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত লড়ব। কিন্তু আমি ভয় পাব না।”
