আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় নিষ্কৃতি পেয়েই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর। তাঁর দাবি, তদন্তকারী আধিকারিকরা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতার নাম নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন।
দীর্ঘ শুনানির পর গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞা ঠাকুর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ শ্রীকান্ত পুরোহিত-সহ মোট সাতজনকে মালেগাঁও মামলায় বেকসুর খালাস করা হয়েছে। এর পরেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে প্রজ্ঞা বলেন, "তদন্ত চলাকালীন আমাকে প্ররোচিত করা হয়েছিল যাতে আমি দেশের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলি। কিন্তু আমি তা করিনি।"
বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ প্রজ্ঞার আরও অভিযোগ, "যোগী আদিত্যনাথ, মোহন ভাগবত, ইন্দ্রেশ কুমার, রাম মাধব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম বললেই আর মারব না- এই শর্ত দিয়েই দিনের পর দিন অত্যাচার চালানো হয়েছিল আমার ওপর।"
প্রজ্ঞার দাবি, "আমার ফুসফুস সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গিয়েছিল। অবৈধভাবে হাসপাতালে আটক রাখা হয়েছিল আমাকে। শুধু মুখে এসব নাম বলানোর জন্য এমন নির্যাতন চালানো হয়েছিল। আমি গুজরাতে থাকতাম বলে মোদির নাম বলার জন্যও জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি মিথ্যে বলিনি, তাই কারও নাম বলিনি।"
প্রজ্ঞার এই বক্তব্য এমন এক সময় সামনে এল, যখন মামলার রায়েই একটি বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এক 'ঘনিষ্ঠ সাক্ষী', যে পরে সরকার পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ায়, সে আদালতে দাবি করেছে- তাঁকে চাপ দিয়ে যোগী আদিত্যনাথ এবং আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত অন্তত চার জনের নাম বলাতে চাওয়া হয়েছিল।
প্রাক্তন এন্টি-টেররিস্ট স্কোয়াড (এটিএস) আধিকারিক মহবুব মুজাওয়ার আদালতে দাবি করেছিলেন, "আমার ঊর্ধ্বতন কর্তারা চেয়েছিলেন আমি যেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতকে গ্রেফতার করি। আমি সেই নির্দেশ মানিনি।" যদিও আদালত তাঁর এই বক্তব্যকে মান্যতা দেয়নি।
২০০৮-এর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার মালেগাঁও শহরে স্থানীয় মসজিদের কাছে এক বিস্ফোরণে সাত জনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় আহত হয়েছিলেন ১০০-রও বেশি। তদন্তে জানা যায়, মালেগাঁও শহরে মসজিদ লাগোয়া কবরস্থানে একটি মোটরসাইকেলে দু'টি বোমা রাখা ছিল। তাতেই বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনার তদন্তে নামে মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাসদমন শাখা (এটিএস)। তদন্তে উঠে আসে যে ঘটনার নেপথ্যে ছিল একটি একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেফতার হন প্রজ্ঞা এবং প্রাক্তন সেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদশ্রীকান্ত পুরোহিত। কিন্তু, তাঁরা তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে দু'জনেই জামিন পান।
২০১১ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলা জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র কাছে যায়। তার পর আদালতে একাধিক চার্জশিট এবং অতিরিক্ত চার্জশিট জমা পড়ে। ২০১৮ সালে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সাত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। বিচার চলার সময়ে আদালত ৩২৩ জন সাক্ষীর বয়ান খতিয়ে দেখে। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশেষ আদালতে কয়েকশো পাতার তথ্যপ্রমাণ পেশ করে এনআইএ। ১৯ এপ্রিল রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারক। অন্য দিকে, বিতর্কিত প্রজ্ঞাকে ২০১৯ সালে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট দিয়েছিল বিজেপি। তিনিও জয়ী হয়েছিলেন। ২০২৪ সালে অবশ্য তাঁকে আর প্রার্থী করেনি পদ্মশিবির।
