আজকাল ওয়েবডেস্ক: কাশির সিরাপ খেয়ে মৃত্যুমিছিল। দেশজুড়ে শোকের ছায়া। অবশেষে কাশির সিরাপের প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিক, মূল অভিযুক্ত এস রঙ্গনাথনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। কাশির সিরাপ 'কোল্ডরিফ' খেয়েই একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এস রঙ্গনাথনের সংস্থা শ্রীসান ফার্মাসিউটিকালে তৈরি হত এই কাশির সিরাপ। মূল অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি অভিযানও চলছিল।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মধ্যপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে একযোগে মূল অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ। সেই অভিযান চলাকালীন চেন্নাই থেকে এস রঙ্গনাথনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রাতে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দীর্ঘ জেরার পর মধ্যরাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, 'কোল্ডরিফ' কাশির সিরাপ খেয়ে এখনও পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানে ২০ জনের বেশি শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যার পরেই এই কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরীক্ষানিরীক্ষার পর জানা গেছে, সিরাপটিতে ৪৮.৬ শতাংশ ডাইথিলিন গ্লাইকল রয়েছে। এই বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে শিশুদের কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও দেখুন: বৃষ্টি পিছু ছাড়ছে না, আর কতদিন বাংলায় ভোগান্তি? জানিয়ে দিল আবহাওয়া দপ্তর
শিশু মৃত্যুর একাধিক ঘটনার পর কফ সিরাপ ব্যবহারে কড়া অবস্থান নিল কর্ণাটক ও ঝাড়খণ্ড সরকার। সোমবার কর্ণাটক রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এক নির্দেশিকা জারি করে জানায়, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের কাশি ও সর্দির সিরাপ প্রেসক্রাইব বা বিক্রি করা যাবে না। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কফ সিরাপ সেবনে শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। রাজ্য খাদ্য নিরাপত্তা ও ওষুধ প্রশাসন (FSDA)–এর জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তামিলনাড়ুর একটি ওষুধ কোম্পানির তৈরি Coldrif Syrup (Batch No. SR-13) সেবনের পর মধ্যপ্রদেশে একাধিক শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এর পরই তামিলনাড়ু ড্রাগ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট ওই ব্যাচের সিরাপের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও, রাজস্থানে Dextromethorphan Hydrobromide Syrup IP, যা জয়পুরের কেসন্স ফার্মা তৈরি করেছিল, তা সেবনের পরেও কয়েকজন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঝাড়খণ্ড সরকারও সোমবার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্যে Coldrif, Respifresh এবং Relife নামের তিনটি কফ সিরাপের বিক্রি, কেনাবেচা ও ব্যবহার অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে এই সিরাপগুলির সঙ্গে শিশুমৃত্যুর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রবিবার দেশের সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসচিব এবং ড্রাগ কন্ট্রোল আধিকারিকদের নিয়ে একটি জরুরি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে কেন্দ্র। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ‘কোল্ডরিফ’ নামের একটি কফ সিরাপ খেয়ে অন্তত ২০ শিশুর মৃত্যুর পরেই এই পদক্ষেপ করা হল। পরীক্ষায় ওই সিরাপে ডাইইথিলিন গ্লাইকল নামে একটি বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি মিলেছে। বৈঠকে কফ সিরাপ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির উপর নজরদারি বাড়ানো, শিশুদের ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে ওষুধ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় এড়াতে নজরদারি ব্যবস্থা আরও জোরদার করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সমস্ত ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে সংশোধিত ‘শিডিউল এম’ কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে, যার মধ্যে ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস’ নিয়মও রয়েছে। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, নিয়ম না মানলে উৎপাদন ইউনিটের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে। শিশুদের, বিশেষত ছোটদের, কফ সিরাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আরও সচেতন হওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, শিশুদের বেশিরভাগ সর্দি-কাশি নিজে থেকেই সেরে যায় এবং তার জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয় না। ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সময়মতো তথ্য সংগ্রহ এবং ‘ইন্টিগ্রেটেড হেলথ ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম’ ব্যবহার করে জনসচেতনতা বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে।
