আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের প্রতিরক্ষা বিমান শিল্পে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করল ব্রাজিলের Embraer Defence & Security এবং ভারতেরমহিন্দ্রা গ্রুপ। দুই সংস্থা যৌথভাবে ভারতের Medium Transport Aircraft (MTA) প্রকল্পের জন্য C-390 Millennium মাল্টি-মিশন পরিবহন বিমান প্রস্তাব করার লক্ষ্যে এক কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই অংশীদারিত্বকে বিশেষজ্ঞরা ভারতের আকাশপথ পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্রাজিল ও ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের মধ্যে গভীরতর সম্পর্ক গঠনের এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে মনে করছেন।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই সংস্থা একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর করেছিল, যা এই নতুন সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করে। নতুন চুক্তির অধীনে, উভয় সংস্থা বিপণন, শিল্পায়ন ও সাপ্লাই চেইন উন্নয়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূমিকা নির্ধারণ করেছে। তারা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে স্থানীয় অংশীদার চিহ্নিত করবে, যারা C-390 বিমানের উৎপাদন, সংযোজন এবং সারাজীবনের রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবে।

চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্থানীয় উৎপাদন ও টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ পরিকাঠামোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভারতের বেসরকারি ও সরকারি উভয় ক্ষেত্রের সংস্থাগুলিকে বিমান নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের বিমান শিল্পকে আরও শক্তিশালী করা এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূল উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি জমি এখন ব্রহ্মোসের রেঞ্জের মধ্যে, লখনউয়ে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম ব্যাচ উদ্বোধন করে হুঙ্কার রাজনাথের

Embraer C-390 Millennium হল এক নতুন প্রজন্মের বহুমুখী পরিবহন বিমান, যা কার্যক্ষমতা, নমনীয়তা এবং কম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি ভার বহনে ও গতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রতিযোগীদের ছাড়িয়ে গেছে। বিমানটি দ্রুত বিভিন্ন মিশনের উপযোগী করে তোলা যায় — যেমন সৈন্য ও পণ্য পরিবহন, চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া (মেডিকেল ইভাকুয়েশন), প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, এমনকি আকাশে জ্বালানি সরবরাহের কাজেও এটি ব্যবহার করা যায়।

উন্নত fly-by-wire নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং আধুনিক অ্যাভিওনিক্স প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত এই বিমানটি বর্তমানে ভারতীয় বিমানবাহিনীর পুরনো An-32 বহরের পরিবর্তে একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। হিমালয়ের উঁচু অঞ্চল থেকে শুরু করে ভারতের উষ্ণ ও সমতলভূমি — দেশের বহুবিধ অপারেশনাল পরিবেশে কাজ করার উপযোগী বিমানটি তৈরি।

মহিন্দ্রা গ্রুপের পক্ষে এই সহযোগিতা তাদের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ও বিমান নির্মাণে উপস্থিতির প্রতিফলন। ২০২৫ সালের আগস্টে Mahindra Aerostructures ফ্রান্সের Airbus Helicopters-এর কাছ থেকে H125 হেলিকপ্টারের মূল ফিউজলাজ নির্মাণ ও সংযোজনের বড় চুক্তি পেয়েছে। এর আগে তারা H130 হেলিকপ্টারের জন্যও একই ধরনের চুক্তি সম্পন্ন করেছিল। এর মাধ্যমে মহিন্দ্রা এখন আন্তর্জাতিক বিমান নির্মাতাদের এক নির্ভরযোগ্য শিল্প অংশীদার হিসেবে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে।

প্রতিরক্ষা খাতে Mahindra Defence Systems ইতিমধ্যেই সাঁজোয়া ও মাইন-প্রটেকটেড যান এবং কৌশলগত সহায়ক সরঞ্জাম উৎপাদনের মাধ্যমে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এবার তারা বিমান শিল্পে প্রবেশ করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা ও বিমান সমাধান প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করছে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, Embraer–Mahindra অংশীদারিত্ব কেবলমাত্র ভারতের বিমান পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তি স্থানান্তর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশীয় উৎপাদন সক্ষমতার বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এই উদ্যোগ ভারতের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।