আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলায় ফের সামনে এল প্রশাসনিক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার এক চাঞ্চল্যকর দৃষ্টান্ত। সরকারি নথিতে একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে 'শূন্য' টাকা। আরেকজনের আয় মাত্র ৩ টাকা। এই দুটি ঘটনা কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। প্রশাসনিক কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে৷ ঘটনা ঘিরে সম্প্রতি চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতনার উচেরা তহসিলের আমদারী গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপ কুমার নামদেবের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে। তাঁর বাবা রামবহোর নামদেব-এর নামে এক আয় সার্টিফিকেট জারি করা হয় যেখানে বলা হয় তিনি বছরে কোনও আয় করেন না। অর্থাৎ তাঁর বার্ষিক আয় 'শূন্য' টাকা। সূত্রে জানা গিয়েছে, সার্টিফিকেটটি ৭ এপ্রিল, ২০২৫-এ জারি করা হয়েছিল (কেস নম্বর RS/429/0111/22122/2025/B-121/2025)। এতে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প আধিকারিক রবিশঙ্কর শর্মা।
এই হাস্যকর তথ্যটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ভাইরাল ভিডিও ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। পরবর্তীতে চাপের মুখে পড়ে প্রশাসন ২০ জুলাই সার্টিফিকেটটি বাতিল করে দেয়। এরপর ফের সংশোধিত সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয় যেখানে সন্দীপের বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৪০,০০০ টাকা।
এখানেই থেমে নেই৷ এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই, সাতনার কোঠি তহসিল থেকে আরেকটি অদ্ভুত ঘটনা সামনে আসে। নয়া গাঁও গ্রামের বাসিন্দা রাম স্বরূপ, পিতা শ্যামলাল-এর নামে ২২ জুলাই, ২০২৫ তারিখে জারি করা এক আয় সার্টিফিকেটে তাঁর বার্ষিক আয় দেখানো হয় মাত্র ৩ টাকা। অর্থাৎ, মাসে প্রায় ২৫ পয়সা বা দিনে এক পয়সারও কম। এই সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেন তহসিলদার সৌরভ দ্বিবেদী।

খবর অনুযায়ী পরে তহসিলদার দ্বিবেদী ব্যাখ্যা দেন যে, অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ায় ভুলবশত ৩০,০০০ টাকার বদলে ৩ টাকা লেখা পড়ে গিয়েছে। যদিও আবেদনকারীর স্বঘোষণাপত্রে সঠিক আয় উল্লেখ ছিল, তবু যাচাই না করেই এই সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। পরে এই সার্টিফিকেটটিও বাতিল করে নতুন সার্টিফিকেট জারি করা হয়।
একই জেলার মধ্যে কিছুদিনের ব্যবধানে দুটি এমন মারাত্মক ভুল স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজকর্মীরা বলছেন, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার প্রমাণ। তাঁরা দাবি করছেন, এই ধরণের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিৎ।
একজন স্থানীয় সমাজকর্মী প্রশ্ন তোলেন, 'যদি সার্টিফিকেটে কারও আয় শূন্য বা ৩ টাকা দেখানো হয়, তবে গরীবদের জন্য বরাদ্দ সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে কীভাবে? এটা নিছক ভুল নয়, এটা মানুষের অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।'

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ‘ক্লারিকাল এরর’ বা প্রযুক্তিগত ত্রুটির ফল। তবে ঘটনার জেরে এখনও মূল প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এমন আরও কত ভুল সার্টিফিকেট অজান্তেই ঘুরছে, যার প্রভাব পড়ছে শিক্ষাবৃত্তি, রেশন কার্ড, সংরক্ষণ, ও অন্যান্য সরকারি সুবিধার ওপর। যদি যাচাই প্রক্রিয়াই দুর্বল হয়, তাহলে এই ভুলগুলো গরীব মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনুমান করছেন অনেকে।
