আজকাল ওয়েবডেস্ক: আসন রফা হয়নি। এবার আরও অদ্ভুত পরিস্থিতি! দারভাঙ্গা জেলার একটি আসনে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধেই প্রচার চালাবেন। কেন এমন পরিস্থিতি হল? আসলে বিরোধী জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হওয়ার আগেই, আরজেডি গৌরা বাউরাম থেকে তাদের নেতা আফজল আলি খানকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দলীয় নেতৃত্ব আফজালকে আরজেডির হ্যারিকেন প্রতীক দিয়েছিল। তাঁকেই আরজেডি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। 

দলীয় টিকিচ পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন আফজল। মনে আনন্দ নিয়ে পাটনা থেকে প্রায় চার ঘন্টার দূরত্বে নিজের নির্বাচনী এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। শুরু করেন প্রচারের তোড়জোড়। কিন্তু, এসবের মধ্যেই অবস্থা পাল্টে যায়। আফজলের ভোটে লড়ার প্রস্তুতির মধ্যেই আরজেডি নেতৃত্ব মুকেশ সাহনির 'বিকাশশীল ইনসান পার্টি'র সঙ্গে জোটের রফা করে। আসন ভাগাভাগির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে, গৌর বাউরাম আসনটি 'বিকাশশীল ইনসান পার্টি'-র কাছে চলে যায়। ঠিক হয় বিহারের বিরোধী জোট 'মহাগঠবন্ধন'-এর সব শরিক দল গৌর বাউরাম আসনটিতে 'বিকাশশীল ইনসান পার্টি'র  প্রার্থী সন্তোষ সাহনিকে সমর্থন করবে।

এরপরই আরজেডি নেতৃত্ব আফজল আলি খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে দলীয় হ্যারিকেন প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়ার এবং লড়াই থেকে সরে আসার জন্য অনুরোধ করেন। তবে আফজল লড়াই থেকে সরতে নারাজ!

আফজল আরজেডি প্রার্থী হিসাবে গৌর বাউরাম আসনটি থেকে মনোনয়ন দাখিল করেন। আরজেডি নেতৃত্ব নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেয় যে, দল আফজল আলি খানের প্রার্থী পদকে সমর্থন করে না। কিন্তু কমিশন জানায় যে, তারা আফজাল আলি খানকে নির্বাচনী দৌড় থেকে বাদ দিতে অপারগ। কারণ আফজল যথাযথভাবেই কাগজপত্র-সহ মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

সুতরাং, এখন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আরজেডি-র হ্যারিকেন প্রতীকের পাশে জ্বল জ্বল করবে আফজল আলি খানের নাম। ফলে নির্বাচনী প্রচারে এই কেন্দ্রে তেজস্বী যাদবদের আরজেডি প্রতীকের প্রতিনিধিত্বকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধেই প্রচার চালাতে হবে। যদিও 'মহাগঠবন্ধন'-এর শরিকরা (যার মধ্যে আরজেডিও রয়েছে) 'বিকাশশীল ইনসান পার্টি' প্রার্থী সন্তোষ সাহনির পক্ষেই তাদের সমর্থন জারি রাখবেন। তবে আফজল আলি খানের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি গৌর বাউরাম আসনটির ফলাফলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা।

এর আগে, লোকসভা নির্বাচনের সময়, রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস প্রথমে অরবিন্দ দামোরকে তাদের প্রার্থী করেছিল। পরে, বিরোধী দল 'ভারত আদিবাসী পার্টি'র প্রার্থী রাজকুমার রোয়াতকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। দামোতকে কংগ্রেসের প্রতীক ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। এরপর দামোত নিখোঁজ হয়ে যান এবং সময়সীমার পরেই ফিরে আসেন। এর ফলে কংগ্রেস নেতারা দলের 'হাত' প্রতীক ধারণকারী প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে শুরু করেন। শেষে রোয়াত-ই নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু দামোত ওই কেন্দ্রে প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কঠিন প্রতিযোগিতায়, এই ধরণের বিভ্রান্তি ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে।

২০২০ সালের বিহার নির্বাচনে গৌরা বাউরাম আসনটিতে জিতেছিলেন 'বিকাশশীল ইনসান পার্টি'র স্বর্ণ সিং। কিন্তু সিং পরে তিনি বিজেপিতে চলে যান। ২০১০ এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনে জেডিইউ প্রার্থী আসনটিতে জিতেছিলেন।

উল্লেখ্য, আসন ভাগাভাগির সময় মহাগঠবন্ধনের শরিকদের মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কিছু মতপার্থক্য দূর করা যায়নি। এর ফলে, বিহারের বেশ কয়েকটি আসনে 'বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই' হবে, যেখানে মহাজোটের শরিকরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

আরও পড়ুন- ভারী দুর্যোগের সতর্কতা জারি করল মৌসম ভবন, রক্ষা পাবে বাংলা?‌ জেনে নিন