আজকাল ওয়েবডেস্ক: শ্রাবণ মাসে সারা দেশজুড়ে নাগ দেবতার আরাধনায় পালিত হয় নাগপঞ্চমী। ভক্তরা দুধ, ফুল দিয়ে পুজো সারেন। তবে বিহারে এই উৎসব পালনের রীতি একদিকে যেমন বিস্ময়কর, তেমনই হাড়হিম করা। এখানে সকলে জ্যান্ত সাপ হাতে নিয়ে, গলায় জড়িয়ে ঈশ্বরের আরাধনা করেন। এ বছরের উৎসব গত ২৯ জুলাই শেষ হলেও, সেই অনুষ্ঠানের ভিডিও এখনও নেটপাড়ায় চর্চার কেন্দ্রে। তা দেখে শিউরে উঠছেন অনেকেই।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের সমস্তিপুর জেলার সিঙ্ঘিয়া ঘাট এই প্রথার মূল কেন্দ্র। এখানে প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাৎসরিক নাগপঞ্চমী মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রথা অনুযায়ী, ভক্তরা প্রথমে সিঙ্ঘিয়া বাজারের মা ভগবতী মন্দিরে পুজো দেন। এরপর জ্যান্ত সাপ সঙ্গে নিয়ে মূল আচারের জন্য এগিয়ে যান বুড়ি গণ্ডক নদীর দিকে।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে যে দৃশ্য দেখা গিয়েছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সকলের হাতেই কিলবিল করছে বিষধর সাপ। কেউ অবলীলায় গলায় জড়িয়ে রেখেছেন, কেউ বা আবার সাপে জড়ানো লাঠি হাতে মিছিলে হাঁটছেন।

এই প্রথাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বহু ব্যবহারকারীই বিষয়টিকে 'পশুদের উপর নিষ্ঠুরতা' বলে চিহ্নিত করেছেন এবং এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। একজনের মন্তব্য, "আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, ভারতীয় আইন অনুযায়ী এটা পশুদের উপর অত্যাচার।" অন্য একজন লিখেছেন, "সাপদের উপর অত্যাচার করে আধ্যাত্মিকতা হয় কী করে? ওদের প্রাকৃতিক পরিবেশে শান্তিতে থাকতে দিন।"

আরও পড়ুনঃ গর্ভপাতের পরেও 'ওটা' চাই, নয়তো চাকরি খেয়ে নেব! মহিলা কর্মীর প্রতি ক্রীতদাসী সুলভ আচরণে রাগে ফুঁসছে নেটপাড়া...

আরেকজন ক্ষোভ উগরে দিয়ে লেখেন, "এটা অসম্ভব নির্যাতন!! বাস্তুতন্ত্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর অন্য অনেক উপায় আছে। কিন্তু যুবকদের মাথায় উত্তেজিত সাপ তুলে মিছিলে হাঁটতে উৎসাহ দেওয়াটা তাদের অসংবেদনশীল করে তোলা ছাড়া আর কিছুই নয়।"

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, মিথিলা অঞ্চলের বেগুসরাই, মুজফ্‌ফরপুর, খাগারিয়া এবং সহরসা-সহ বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তরা এই মেলায় অংশ নেন। তাঁরা স্থানীয় সর্পদেবী মাতা বিষহরির নামে জয়ধ্বনি দিতে দিতে বিভিন্ন আচার পালন করেন। এমনকী, কেউ কেউ মুখ দিয়ে সাপ ধরে সেটিকে সাবধানে কাছের জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে আসেন।

আরও পড়ুনঃ হাত বেঁধে বেল্ট দিয়ে... ‘বিকৃত আনন্দ’ পেতে স্ত্রীর সঙ্গে এ কী করলেন স্বামী? অন্ধ্রের ঘটনায় শিউরে উঠছে দেশ...

পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারা 'গহ্বর' (পবিত্র স্থান)-এর ভিতরে উর্বরতা, সুরক্ষা এবং পরিবারের মঙ্গল কামনায় বিশেষ পুজো করেন। মনস্কামনা পূরণ হলে তাঁরা 'ঝাঁপ' (বিশেষ ভোগ) দিয়ে যান এবং প্রসাদ বিতরণ করেন। তবে এত সাপ নিয়ে এমন বিশাল জমায়েত হলেও, স্থানীয় সূত্রের খবর, আজ পর্যন্ত এই মেলায় সাপের কামড়ে কোনও দুর্ঘটনার রেকর্ড নেই। বিশ্বাস এবং বিতর্কের এই সহাবস্থানই সিঙ্ঘিয়া ঘাটের নাগপঞ্চমীকে স্বতন্ত্র করে তুলেছে।

আরও পড়ুনঃ ব্যাগে শুধু প্রসাধনী নয়, থাকে চিকেন লেগ পিসও! পার্টিতে মহিলার কাণ্ডে নেটদুনিয়ায় হাসির রোল, সঙ্গে জোর বিতর্ক...