আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতীয় জাতি জনগণনা বাস্তবায়নের দাবিতে আজ বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস ওবিসি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কেন্দ্র সরকারকে তীব্র চাপে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া-র নেতৃত্বে দুই দিনব্যাপী এই বৈঠকে 'বেঙ্গালুরু ঘোষণা' গৃহীত হয়েছে, যেখানে তেলেঙ্গানার মডেলে জাতিগত জনগণনার দাবি জানানো হয়েছে। সিদ্দারামাইয়া বলেন, “জাতীয় জনগণনায় প্রত্যেক ব্যক্তির এবং জাতির সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান ও রাজনৈতিক অবস্থা যুক্তভাবে বিবেচনা করতে হবে। কেবল সংখ্যা নয়, সামাজিক বাস্তবতাও উঠে আসা জরুরি।”
সভায় একটি দ্বিতীয় প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, কংগ্রেস সংবিধানিক সীমা ভেঙে ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণের ৫০% সীমা অতিক্রম করবে। এই অতিরিক্ত সংরক্ষণ শিক্ষা, চাকরি, রাজনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আরেকটি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ১৫(৪) ধারার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ প্রবর্তন করা হোক।
ওবিসি উপদেষ্টা পরিষদ একটি জোরালো দেশব্যাপী প্রচার অভিযান চালানোর ডাক দিয়েছে, যার নেতৃত্বে থাকবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ও 'ন্যায় যোদ্ধা' রাহুল গান্ধী। সভায় রাহুল গান্ধীর প্রশংসা করে বলা হয়, “রাহুলজির অবিচল অবস্থান ‘মনুবাদী মোদি সরকারের’ ওপর জাতি জনগণনা বাস্তবায়নে চাপ সৃষ্টি করেছে। পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পক্ষে তাঁর লড়াই সর্বজনীন স্বীকৃতি পেয়েছে।”
সিদ্দারামাইয়া বলেন, “জাতি জনগণনার জন্য কেন্দ্রকে রাজি করানো কংগ্রেসের জন্য একটি ছোট পদক্ষেপ হলেও, এটি সামাজিক ন্যায়ের পথে বিশাল অগ্রগতি। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই ভারত একদিন একটি সাম্যবাদী সমাজ গঠনের স্বপ্ন পূরণ করবে।” রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট কংগ্রেসের ওবিসি নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং ওবিসি বিষয়ক নিয়মিত কর্মশালা আয়োজনের আহ্বান জানান।
এদিকে কেন্দ্র সরকার জাতিগত জনগণনাকে ২০২৫ সালের জাতীয় জনগণনার অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মন্ত্রিসভা-র রাজনৈতিক বিষয়ক কমিটি ৩০ এপ্রিল ২০২৫ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা ১৯৩১ সালের পর এই প্রথম পূর্ণাঙ্গ জাতি-ভিত্তিক জনগণনা হবে। ১৯৫১ সালের পর থেকে শুধুমাত্র তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের গোনা হয়েছিল, অন্য জাতিগুলির বিস্তারিত তথ্য কখনও সামনে আসেনি।
জাতি জনগণনার মূল উদ্দেশ্য হল ওবিসি-সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য সংগ্রহ করা। এই তথ্য সরকারের নীতিনির্ধারণ ও সম্পদ বণ্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে সংরক্ষণ ও উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই তথ্য একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে তুলবে।
তবে জাতি জনগণনাকে কেন্দ্র করে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। সমর্থকরা একে সামাজিক বৈষম্য চিহ্নিত করার পথে জরুরি পদক্ষেপ মনে করলেও, সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন এতে জাতি নিয়ে বিভাজন ও উত্তেজনা বাড়তে পারে। এছাড়াও, জাতিগত পরিচয়ের জটিলতা ও তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবুও বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেসের আজকের ঘোষণাপত্র ও আগামী দিনের আন্দোলনের পরিকল্পনা দেখিয়ে দিল—জাতি জনগণনা প্রশ্নে দলটি ন্যায় ও সংবিধানিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ের পথে এগোচ্ছে।
