আজকাল ওয়েবডেস্ক: একটি শিশুর জীবনের মূল্য আপনি কীভাবে দেবেন? কীভাবে মূল্যায়ন করবেন এর দাম? এটা করা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, তাই না? তবে, মধ্যপ্রদেশে মারা যাওয়া ২৩ জন শিশুর বেশিরভাগের জন্য যে ডাক্তার এই কাশির সিরাপ লিখেছিলেন, তাঁর কাছে উত্তর ছিল সহজ এবং অত্যন্ত কম, মাত্র ২.৫৪ টাকা। স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের কোল্ডরিফ কাশির সিরাপের বাজার দর ২৪.৫৪ টাকা। প্রতিটি বোতল বিক্রি হলে ওই ডাক্তার ১০ শতাংশ কমিশন হিসেবে এই পরিমাণ টাকা পেতেন।

পুলিশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায় চার বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ফিক্সড-ডোজ কম্বিনেশন (এফডিসি) ওষুধ লিখে দেওয়া নিষিদ্ধ করার পরেও, পারাসিয়ার সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োজিত শিশুবিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রবীণ সোনি তাঁর ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস থেকে শিশুদের জন্য বর্তমানে নিষিদ্ধ কোল্ডরিফ সিরাপ লিখে দিয়েছিলেন।

তামিলনাড়ুর সংস্থা স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি এই সিরাপটিতে বিষাক্ত ডাইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি) রয়েছে। যা কিডনি বিকল হওয়ার কারণ হিসাবে পরিচিত রাসায়নিক। কোল্ডরিফে অনুমোদিত সীমার চেয়ে ডিইজি অনেক বেশি ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তকারীরা বলছেন যে, ডাঃ সোনি কোল্ডরিফের ঝুঁকি জানা সত্ত্বেও বারবার ওষুধটি নিজের প্রেসক্রিপশনে লিখেছিলেন। মধ্যপ্রদেশে মারা যাওয়া ২৩ জন শিশুর বেশিরভাগকেই তিনি এই সিরাপটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন: ভারতের তিনটি কাশির সিরাপকে ‘নিম্নমান’-এর ঘোষণা করেছে হু, একটি কোল্ডরিফ, বাকি দু’টি কী কী

সোনি এবং স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিক রঙ্গনাথন দু’জনেই এখন পুলিশ হেফাজতে। তামিলনাড়ু সরকার সংস্থাটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়েছে।

আদালতে দাখিল করা পুলিশের রিপোর্ট অনুসারে, সোনি কমিশন গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁর আইনজীবী পবন শুক্লা স্বীকারোক্তিটিকে ‘বানানো এবং আইনত মূল্যহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। শুক্লা বলেছেন, “পুলিশকে একটি গল্প সম্পূর্ণ করতে হয়েছিল। ডাঃ সোনির বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও প্রমাণ নেই।” তিনি আরও বলেন, “পুলিশ এই গল্পটি তৈরি করেছে এবং একটি স্মারকলিপি তৈরি করেছে যার কোনও প্রমাণ নেই। ১০ শতাংশ কমিশনের দাবি মিথ্যে।”

এর আগে, ডাক্তারের পরিবারের যোগসাজেশ খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশ বলেছিল যে ডাঃ সোনির প্রেসক্রাইব করা ওষুধগুলি তাঁর স্ত্রী এবং ভাগ্নের মালিকানাধীন ওষুধের দোকানের মাধ্যমে বিক্রি করা হত।

স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে দেশব্যাপী স্পষ্ট নির্দেশ জারি করেছিল, সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে চার বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এফডিসি ওষুধ না লেখার জন্য সতর্ক করা হয়। তবুও, পুলিশ রিপোর্ট অনুসারে, ডাঃ সোনি সিরাপটি লিখেছিলেন এবং রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে এটির কারণে শিশুদের মূত্রনালীতে সমস্যা এবং কিডনি ব্যর্থতা দেখা দেওয়ার পরেও তিনি তা লেখা বন্ধ করেননি। তাঁর বেশ কয়েকজন রোগীকে পারাসিয়া থেকে নাগপুরে রেফার করা হয়েছিল। সেখানে তারা সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে মারা যায়।

মধ্যপ্রদেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই প্রথম অভিযোগ উঠছে না। দশ বছর আগে, মধ্যপ্রদেশ মেডিকেল কাউন্সিলের কাছে একটি অভিযোগ জমা পড়েছিল যে ১৪টি জেলার ২০ জন বিশিষ্ট চিকিৎসক তাদের পরিবারের সঙ্গে ইতালিতে বিলাসবহুল ভ্রমণে গিয়েছিলেন। অভিযোগ করা হয়েছিস যে এই ভ্রমণগুলি একটি ফার্মা কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল এবং বিনিময়ে তাঁরা সংস্থার ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছিলেন।

২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, বেশ কয়েকজন সরকারি ডাক্তারের বিরুদ্ধে রোগীদের সম্মতি ছাড়াই অবৈধ ওষুধের পরীক্ষা চালানোর অভিযোগও আনা হয়েছিল। ইউনিফর্ম কোড ফর ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং প্র্যাকটিসের অধীনে স্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও, ফার্মা কোম্পানি বা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কোনও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।