আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফসলের বীজ বপন হয় শুনেছেন। শুনেছেন বীজ বপন হয় মেঘের? তা থেকেই ঝমঝমিয়ে নামে বৃষ্টি, তাতে ভিজতে পারে শহর, শহরতলি। এবার এই প্রক্রিয়া পরীক্ষা করবে ভারতের রাজধানী।
দিল্লি ভারতের রাজধানী হিসেবে পরিচিত, পরিচিত সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক থেকেও। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লি বহুল চর্চিত তার দূষণ নিয়ে। একেবারে প্রাণ ওষ্ঠাগত, দূষণে জর্জরিত সমগ্র দিল্লি, সংলগ্ন এলাকা। পরিস্থিতি ফি বছর জটিল হয় ঠিক পুজোর শেষ থেকে গোটা শীট পর্যন্ত। প্রতিবছরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশকিছু উপায় অবলম্বন করে দিল্লি সরকার। কখনও দিওয়ালিতে বাজি ফাটানো বন্ধ থাকে, কখনও বন্ধ করা হয় খড় পোড়ানো। তাতেও খুব একটা উন্নতি হয় না পরিস্থিতির। বাতাসে বিষ। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় স্থানীয়দের। বন্ধ রাখতে হয় স্কুল-কলেজ অফিস। সেই দিল্লিতেই এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপ। ক্লাউড সিডিং। এককথায় কৃত্রিম বৃষ্টি নামবে রাজধানীতে।
আরও পড়ুন: ঘরের ছেলে ফিরছে ঘরে, নাসার সম্মতির পরেই একের পর এক ধাপ পেরিয়ে পৃথিবীতে ফিরছেন শুভাংশুরা, কত সময়
কী এই ক্লাউড সিডিং?
মূলত কৃত্রিম বৃষ্টি, আর্টিফিশিয়াল রেইন-কেই বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয় ক্লাউড সিডিং। এই প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য, বাতাসকে দূষণ মুক্ত করা। ক্লাউড সিডিং হলে, ওই কৃত্রিম বৃষ্টির পর বাতাস পরিষ্কার হয়। বাতাসে মিশে থাকা ধুলো, ধোঁয়া ও কেমিক্যাল ধুয়ে মুছে যায়।
কীভাবে হয় ক্লাউড সিডিং প্রক্রিয়া?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লাউড সিডিং হল মেঘের সঙ্গে সিলভার আয়োডাইড এবং শুষ্ক বরফের মতো বিশেষ পদার্থ যুক্ত করার প্রক্রিয়া। হয় বিমানের মাধ্যমে কিংবা ভূ-ভাগ থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে কৃত্রিম পদার্থ মিশিয়ে দেওয়া হয় মেঘে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয়োডাইড কণা মেঘে ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। মেঘের মেটে তখন ধীরে ধীরে আরও জমা হয় বরফকণার মতো পদার্থ। এক সময়ে মেঘ ভারী হয়ে যাওয়ার পর, তা ফেটে পড়ে মাটিতে। বৃষ্টি আকারে।

দিল্লি ব্যাপকভাবে দূষণে জর্জরিত হওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৪-২৫ শীতকালে দিল্লি ভারতের সবচেয়ে দূষিত মেগাসিটি ছিল, যেখানে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে ১৭৫ মাইক্রোগ্রাম PM2.5 ঘনত্ব ছিল। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (EPIC) এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশিকা অনুসারে, শহরের বায়ু দূষণ নাগরিকদের আয়ু গড়ে ১১.৯ বছর কমিয়ে দিচ্ছে।পরিস্থিতি বিচারে এই সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি।
এর আগে, দিল্লি জুলাই মাসে পরীক্ষামূলক এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, দিল্লি সরকারের ৪ থেকে ১১ জুলাইয়ের মধ্যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রাথমিক পরীক্ষা চালাবে। তবে এই সময়ে বৃষ্টি চলে আসায় সময় বদলে বাধ্য হয়। যুক্তি ছিল, বৃষ্টির সময়, আর কৃত্রিম বৃষ্টির প্রয়োজন কী।
যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, মেঘে বীজ বপনের জন্য মৌসুমি মেঘের প্রয়োজন। মেঘে বীজ বপন কেবল তখনই কাজ করে যখন আকাশে ইতিমধ্যেই মেঘ থাকে এবং প্রায় ৫-১৫ শতাংশ বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করতে পারে। তবে একাধিক বিষয় পর্যালোচনার পর, আগস্ট ৩০ থেকে সেপ্টেম্বর ১০-এর মধ্যে ক্লাউড সিডিং করবে দিল্লি।
শুধু দিল্লি নয়, এর আগে টেক্সাস সহ একাধিক জায়গায় পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ক্লাউড সিডিং করা হয়ে থাকে। টেক্সাসের হড়পা বানের কারণ হিসেবেও অনেকেই ক্লাউড সিডিংকেই দায়ী করছেন। ইন্দোনেশিয়া আবার এই পদ্ধতিকে একেবারে বিপরীত কাজে ব্যবহার করেছে। ইন্দোনেশিয়া বৃষ্টি কমাতে ক্লাউড সিডিং ব্যবহার করেছিল।
