আজকাল ওয়েবডেস্ক: গোটা দেশের নজর, নজর গোটা বিশ্বের। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছেন, আর যেন তর সইছে না ভারতবাসীর। ১৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে সময়মতোই শুরু হয়েছে শুভাংশুদের প্রত্যাবর্তন-প্রক্রিয়া। নাসা-র সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, সংক্ষেপে আইএসএস থেকে আনডকিং প্রক্রিয়া শুরু হয় ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলের। একে একে ধাপ পেরিয়ে মহাকাশযান ফিরবে পৃথিবীতে।
সময় লাগবে প্রায় ২২ ঘণ্টা। যেসব পরিস্থিতি মাথায় রেখে তাদের ফেরার দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল, আপাতত সব অনুকূল রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সোমবার ভারতীয় সময় বিকেল চারটা ৪৫ মিনিট নাগাদ শুরু হয় আনডকিং প্রক্রিয়া। মঙ্গলবার বিকেল তিনটা নাগাদ ক্যালিফর্নিয়া উপকূলে অবতরণ করবে মহাকাশযান। সেখান থেকে বিশেষ জাহাজ মহাকাশযানটিকে নিয়ে আসবে স্থলভাগে। প্রতিবেদন লেখার সময় জানা গিয়েছে, ক্যাপসুল ‘ডিপার্ট বার্ন-১’ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করে ফেলেছে।
আরও পড়ুন: পৃথিবীতে ফেরার আগে ‘জিরো গ্রাভিটি পার্টি’, নাসা কি শুভাংশুদের পাতে মদ-মাংস ‘অ্যালাউ’ করল
ক্যাপসুল যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বায়মণ্ডলে প্রবেশ করবে, তখন তার গতিবেগ থাকবে ২৮ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। তবে বায়ুমণ্ডলে ঢুকলেই তীব্র তাপ এবং ঘর্ষণের মুখোমুখি হবে, তখন এক ধাক্কায় কমিয়ে দেওয়া হবে। তখন তার গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ২৪ হাজার কিলোমিটার।
আনডকিং প্রক্রিয়ার কিছুক্ষণ আগে দেখা গিয়েছিল, কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন পাইলট শুভাংশু 'শুক' শুক্লা এবং মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানানস্কি-উইজননিউস্কি এবং টিবর কাপুকে মহাকাশযানে প্রবেশ করতে। তখন সবাই পৃথিবীতে ফেরার জন্য প্রস্তুত, প্রস্তুত ঘরে ফেরার জন্য।

চার দশক পরে আবার মহাকাশে ভারতের পদচিহ্ন। আর সেই ঐতিহাসিক যাত্রার অন্যতম নায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা রবিবার (১৩ জুলাই, ২০২৫) আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS) থেকে পৃথিবীতে ফেরার আগে এক আবেগঘন ভাষণে বলেন, 'আজকের ভারতকে মহাকাশ থেকে দেখে মনে হয়, এ দেশ আগ্রাসী নয়, বরং আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক, স্বপ্নময়। কারণ এই দেশ আজ কেবলই উন্নয়নশীল নয়—এটা স্বপ্নপূরণের পথে চলেছে। আজও আমি গর্ব করে বলতে পারি, ‘আজকের ভারত এখনও সারে জাঁহাঁ সে আচ্ছা দিখতা হ্যায়।'
আড়াই সপ্তাহ ধরে মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থানের সময় শুক্লা এবং তাঁর তিন আন্তর্জাতিক সহকর্মী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ‘আউটরিচ’ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রস্তাবিত গবেষণার ভিত্তিতে তিনি বিভিন্ন মাইক্রোগ্র্যাভিটি এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, 'এখানে আমরা শুধু বিজ্ঞানের কাজ করিনি। আমরা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখেছি মানুষ কী করতে পারে যখন তারা বিভাজনের বদলে ঐক্য বেছে নেয়। মহাকাশে একসাথে থাকার অভিজ্ঞতা আমাকে এই বিশ্বাস দিয়েছে—যদি আমরা ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে একত্র হই, তাহলে সব অসম্ভবই সম্ভব।'
কাজ সম্পন্ন করে, এবার ঘরে ফেরার পালা। সোমবার শুরু হল সেই প্রত্যাবর্তন পর্ব। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা জানিয়েছে, মহাকাশযানটি অ্যাক্স-৪ ক্রুদের সাথে ৫৫০ পাউন্ড (২৫০ কেজি) এরও বেশি জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনবে, যার মধ্যে রয়েছে কয়েক ডজন পরীক্ষার সরঞ্জাম এবং নমুনা যেগুলি তাঁরা মহাকাশে থাকার সময় পরীক্ষা করে দেখেছেন।
