আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাধারণত গোখরা, কেউটে, রাসেল ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) ও সবুজবোড়া এই চার বিষধর সাপের কামড়ে মানুষ বেশি মারা যায়। রাসেলস ভাইপারের বিষ ফুসফুস, কিডনি নষ্ট করে দেওয়ার মতো বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে। গোখরা ও রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায়, অন্য দুটি সাপের ক্ষেত্রে তা হয় না।  


গোখরা সাধারণত সকালে ও বিকেলে, কেউটে রাতে, রাসেলস ভাইপার দিনে ও রাতে এবং সবুজ বোড়া দিনে কামড়ায়। সাপে কামড়ালে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে হবে। যে জায়গা কামড়েছে, সেই জায়গা খুব বেশি নড়াচড়া করানো যাবে না। সাপে কামড়ানোর পর প্রথম ১০০ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।


প্রতিবছর দেশে গড়ে চার লাখ মানুষকে সাপে কামড়ায়। এর মধ্যে মারা যান গড়ে ৭ হাজার ৫০০ জন। গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের শিকার হন। গ্রামে প্রতি ১ লাখে ৬১৬ জনকে সাপে কামড়ায়। এছাড়া দেশে প্রতিবছর আড়াই হাজার গরু ও ৫৫ হাজারের মতো হাঁস-মুরগি সাপের কামড়ে মারা যায়।


সাপে কামড়ানোর পর ৬১ শতাংশ মানুষ যান ওঝার কাছে। আর ৩৫ শতাংশ মানুষ যান হাসপাতালে। যাঁরা আগে ওঝার কাছে যান, তাঁদের মধ্যে মারা যাওয়ার হার বেশি।


কোনও মানুষকে সাপে কামড়ালে কী করা উচিত, এবিষয়ে বলতে হলে জানা দরকার কাউকে সাপে কামড়ালে সবার আগে তাঁকে শান্ত থাকতে হবে। দৌড়াদৌড়ি করা যাবে না। এতে বিষ দ্রুত ফুসফুসে চলে যেতে পারে। বিষধর সাপে কামড়ানো রোগীর শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে। এই কারণে তাঁকে ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। ক্ষতস্থানের ওপর দড়ি দিয়ে বাঁধলেও কোনও কাজে আসে না; বরং তা সেখানকার রক্তসঞ্চালন বন্ধ করে দিয়ে ওই অঙ্গ অকেজো হয়ে যেতে দিতে পারে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।


এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনির ক্ষতিসহ বিভিন্ন রকম শারীরিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: ভারতের সীমান্ত পাহারা দেবে অ্যাপাচে, থরহরিকম্প হল পাকিস্তান


রাসেলস ভাইপারের পুনরাবির্ভাব ও এই সাপ থেকে মানুষের ঝুঁকির বিষয়ে গবেষণা চলছে। সেখানে উঠে আসে যে ভারতের প্রায় সব গ্রামে রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি রয়েছে। এই গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতেই এই সাপের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণায় উঠে আসে যে এই প্রজাতির সাপের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি রয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামে। তবে বর্তমানে আরো বেশি এলাকায় এই প্রজাতির সাপের উপস্থিতি রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।


এই সাপ যদি কাউকে কামড়ায় তাহলে এর বিষ অতি ভয়ানক। বিবর্তনের ধারায় এর বিষ আরও মারাত্বক হয়েছে। তাই রাসেল ভাইপারকে আপাতভাবে শান্ত বলে মনে হলেও সেটা নয়। যদি নিজের বিপদ বুঝতে পারে তাহলে সেখান থেকে দ্রুত আক্রমণ করা এর কাছে জলভাতের সমান। এমনকি সাপের ওষুধ নেওয়ার পরও এই সাপের কামড়ে মানুষের মারা যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে প্রতিদিন।