আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্র সরকারের সদ্য প্রস্তাবিত বিলকে ঘিরে বিতর্কের মধ্যে দেশের প্রধান বিচারপতি (CJI) বি.আর. গাভাই এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি নির্বাহীই বিচারকের ভূমিকা পালন করে, তবে আমরা সংবিধান প্রদত্ত separation of powers–এর মৌল ধারণাকে ধ্বংস করব।”

 

কেন্দ্রের এই বিল অনুযায়ী, কোনো নির্বাচিত বিধায়ক, সাংসদ বা এমনকি মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী কিংবা প্রধানমন্ত্রী যদি এক মাসের জন্য জেলে যান, তবে আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হলেও তাঁদের পদচ্যুত করা যাবে। এই প্রেক্ষিতেই প্রধান বিচারপতির বক্তব্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

 

“বুলডোজার ন্যায়বিচার” প্রসঙ্গ

 

গোয়া হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিজেআই গাভাই স্মরণ করিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক রায়, যেখানে উত্তরপ্রদেশসহ বিজেপি-শাসিত কয়েকটি রাজ্যে নির্বিচার ভাঙচুরের (যা জনপ্রিয়ভাবে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ নামে পরিচিত) বিরুদ্ধে দিশা-নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি বলেন, “আমরা বিচলিত হয়েছিলাম, কারণ যাঁদের বিচারই হয়নি, তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল। আর সেসব পরিবারের নির্দোষ সদস্যরাও শাস্তি পাচ্ছিলেন।” তিনি যোগ করেন, “এমনকি যদি কেউ দোষীও সাব্যস্ত হন, তবুও তাঁর ন্যায়ের অধিকার থাকে। তাই আমরা সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা দিয়েছি।”

 

সংরক্ষণে উপ-শ্রেণিবিন্যাস (Sub-classification) রায়

 

সিজেআই আরও উল্লেখ করেন ২০২৪ সালের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রায়কে, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট ৯-১ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত দেয় যে, তফসিলি জাতি (SC) ও তফসিলি উপজাতি (ST) সংরক্ষণের মধ্যে sub-classification বা উপ-শ্রেণিবিন্যাস করা যাবে। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃতভাবে পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীগুলিকে আলাদা কোটার মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে।

 

এই রায়ে গাভাই জাস্টিস ডি.ওয়াই. চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সদস্য ছিলেন। নিজের রায়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “একই সম্প্রদায়ের একজন মেসন বা কৃষিশ্রমিকের সন্তান গ্রামীণ স্কুলে পড়ে, আর একজন প্রধান সচিবের সন্তান দিল্লি-মুম্বইয়ের সেরা স্কুলে পড়ে—তাদের সমান ধরা যায় না। প্রকৃত সমতা আনতে হলে অসমকে আলাদা আচরণ করাই সংবিধানের মর্ম।”

 

 

নিজের সম্প্রদায় থেকেও সমালোচনা

 

গাভাই স্বীকার করেন, তাঁর এই রায়কে কেন্দ্র করে তিনি নিজের সম্প্রদায়ের ভেতর থেকেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, “বিচারপতি হিসেবে আমার কর্তব্য জনগণের চাহিদা বা সম্প্রদায়ের ইচ্ছা দেখে রায় লেখা নয়, বরং সংবিধান ও নিজের বিবেক অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দেওয়া।”

 

তিনি আরও বলেন, “প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই পরিবার থেকে আইএএস কর্মকর্তা বেরিয়ে আসছে, কিন্তু অন্যদিকে একই সম্প্রদায়ের একজন দিনমজুরের সন্তান সেই সুযোগ পাচ্ছে না। এই বৈষম্য দূর করতেই আমি রায় দিয়েছি।”

 

সংবিধান ও সামাজিক ন্যায়ের পথে অবদান

 

শেষে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক হিসেবে গত ২২-২৩ বছরের যাত্রায় তিনি গর্বিত যে, অন্তত কিছুটা হলেও তিনি ভারতের সংবিধান ও সামাজিক-অর্থনৈতিক ন্যায়ের পথে অবদান রাখতে পেরেছেন।

 

 

 এই বক্তব্যে যেমন কেন্দ্রের সাম্প্রতিক বিলকে ঘিরে বিচার বিভাগের উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে, তেমনই দেশের শীর্ষ আদালতের সাম্প্রতিক কিছু ঐতিহাসিক রায়ের তাৎপর্যও উঠে এসেছে।