আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডিইউ রবিবার বড় ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে, যখন পুরনিয়া জেলার আমৌর বিধানসভা আসনে সাবির আলির প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে পুনরায় সাবা জাফরের নামেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।
শনিবার হঠাৎ করেই দলীয় সদর দপ্তর থেকে ঘোষিত তালিকায় সাবির আলির নাম উঠে আসে, যিনি ২০১৪ সালে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে জেডিইউ কর্মীরা অবাক হয়ে যান। কিন্তু পরের দিনই দল ঘোষণা করে, সাবা জাফরই চূড়ান্ত প্রার্থী, কারণ তিনিই ইতিমধ্যে জেডিইউ-র টিকিটে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা যায়, সাবির আলি শনিবার রাজ্য মন্ত্রী লেশি সিংহের বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় দলে যোগ দেন। উপস্থিত ছিলেন সাবা জাফরও। উল্লেখযোগ্যভাবে, আমৌরই সাবির আলির রাজনৈতিক কেন্দ্র, আর লেশি সিংহের নির্বাচনী কেন্দ্র ধামদহ তার সংলগ্ন এলাকা।
সাংবাদিকদের সামনে সাবা জাফর স্পষ্ট করে বলেন, “কোনও বিভ্রান্তির কারণ নেই। আলি সাহেব দলে ফিরেছেন সীমাঞ্চল অঞ্চলে সংগঠন মজবুত করার জন্য। আমি গতকালই মনোনয়ন জমা দিয়েছি এবং দল কখনও আমার প্রতীক ফেরত দিতে বলেনি।”
আরও পড়ুন: দীপাবলি ও ছটপুজো উপলক্ষে উত্তর পশ্চিম রেলওয়ের বিশেষ ব্যবস্থা, চলবে কত জোড়া বিশেষ ট্রেন
অন্যদিকে, সাবির আলি বলেন, “আমার প্রার্থীপদ সংক্রান্ত খবর দলীয় সূত্র থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু আমি বিষয়টি মন থেকে নিচ্ছি না। আমি জেডিইউ-র জন্য যেখানেই বলা হবে, এমনকি সিয়াচেন হিমবাহেও গিয়ে প্রচার করব।”
জানা গেছে, ২০১০ সালে সাবা জাফর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে আমৌর আসনে জয়ী হয়েছিলেন এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনে জেডিইউ প্রার্থী হিসেবে রানার-আপ হন। কেন তাকে বাদ দিয়ে সাবির আলিকে হঠাৎ প্রার্থী করা হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সাবির আলির রাজনৈতিক যাত্রা যথেষ্ট উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে। তিনি প্রথমে প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি)-র রাজ্যসভা সাংসদ হিসেবে রাজনীতিতে আসেন। পরে জেডিইউ টিকিটে দ্বিতীয়বার রাজ্যসভায় যান। কিন্তু ২০১৪ সালে নীতীশ কুমারের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে, কারণ তিনি প্রকাশ্যে নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছিলেন।
এরপর তিনি বিজেপিতে যোগ দেন, তবে কিছুদিন পর দল থেকে বহিষ্কৃত হন, কারণ কয়েকজন বিজেপি নেতা অভিযোগ করেন, তার সঙ্গে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সন্ত্রাসী ইয়াসিন ভাটকালের সম্পর্ক ছিল। পরে ২০১৫ সালে পুনরায় বিজেপিতে যোগ দিয়ে ২০২১ সালে সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক হন।
তবে এবারে সাবির আলি আবার জেডিইউ-তে ফিরেছেন, এবং দলে ফেরার একদিন পরই তার প্রার্থীপদ বাতিল হয়। তিনি জানিয়েছেন, সোমবারই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন, যদিও এখন প্রশ্ন উঠেছে — তিনি আদৌ প্রার্থী হবেন কিনা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, আমৌর বিধানসভা আসনটি বর্তমানে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (AIMIM)-এর একমাত্র বিধায়ক আখতারুল ইমানের দখলে। সাবির আলি বা সাবা জাফর – যিনিই প্রার্থী হন না কেন, তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে AIMIM-এর এই প্রভাবশালী নেতার সঙ্গেই।
জেডিইউ-র এই অস্বস্তিকর অবস্থার ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, সীমাঞ্চল অঞ্চলে দলের সাংগঠনিক বিভ্রান্তি এবং প্রার্থী বাছাইয়ে অনিশ্চয়তা আসন্ন নির্বাচনে দলের অবস্থানকে দুর্বল করে দিতে পারে।
