আজকাল ওয়েবডেস্ক: তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ফের শিরোনামে তৃণমূল নেতা এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা ডব্লিউএসআরডিএ-এর চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল। নির্বাচনের খেলা আর মাঠের খেলা সম্পূর্ণ আলাদা বলে মন্তব্য করেন তিনি। বুধবার বীরভূমের বোলপুরে বেঙ্গল সুপার লিগের খেলা দেখতে এসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের এই কোর কমিটির আহ্বায়ক। তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ফের রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে বীরভূম জেলায়। এখন বিধানসভা নির্বাচনে তিনি কী খেলা খেলেন সেদিকেই নজর সকলের। তবে ‘সেই খেলায়’ তিনি খেলবেন কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত, বুধবার থেকে বোলপুরে শুরু হয়েছে বেঙ্গল সুপার লিগ ফুটবল টুর্নামেন্ট। আন্তর্জাতিক মানের সেই প্রতিযোগিতায় কোপা টাইগারস্ বীরভূম, বর্ধমান ব্লাস্টারস্, এফসি মেদিনীপুর, সুন্দরবন বেঙ্গল অটো এফসি, হাওড়া- হুগলি ওয়ারিয়রস, নর্থ বেঙ্গল ইউনাইটেড প্রভৃতি দল অংশগ্রহণ করেছে। এর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দান সংলগ্ন স্টেডিয়াম মাঠ। শহরের এটিই একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল, তীরন্দাজি-সহ নানা ধরনের জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। বর্তমানে ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে রয়েছে এই মাঠ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই প্রতিযোগিতায় দর্শকদের টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। তার জন্য নতুন করে করা হয়েছে অস্থায়ী পরিকাঠামো।
এদিন উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হয় রয়্যাল সিটি মালদা বনাম নর্থ বেঙ্গল ইউনাইটেড এর মধ্যে। সেই খেলা দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন অনুব্রত-সহ কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ, বোলপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান পর্ণা ঘোষ এবং অন্যান্য অতিথিরা।
সেখানে খেলার ফাঁকে অনুব্রত মণ্ডল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "এই ধরনের প্রতিযোগিতা বীরভূমে এর আগে কখনও হয়নি। এই প্রথম হল। খুব সুন্দর পরিবেশ। সুষ্ঠুভাবে খেলা যাতে সম্পন্ন হোক এটাই আশা করব।" বীরভূমের দল খেলছে বলে তিনি জানান, বীরভূম অংশগ্রহণ করেছে, আমি খুব খুশি। খুব ভালো লাগছে, আনন্দ লাগছে। আজ থেকে খেলা শুরু হল, ফাইনালেই শেষ হবে। এই খেলা কি বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন "ওটা আলাদা খেলা, এটা আলাদা খেলা।" তবে বিধানসভা নির্বাচনের খেলায় তিনি কি খেলবেন এই প্রশ্ন করা হলে তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে যান।
অনুব্রত মণ্ডলের এই মন্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকের মতে, বিধানসভা নির্বাচনে ভিন্ন রকম ‘খেলা’ হওয়ার ইঙ্গিতই দিয়ে গেলেন তিনি। তবে অনুব্রত মণ্ডলের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য এই প্রথম নয়। লোকসভা হোক বা বিধানসভা নির্বাচন– প্রতিক্ষেত্রে তার ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। এর আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে উন্নয়ন, নকুলদানা, গুড় বাতাসা, চরাম চরাম প্রভৃতি মন্তব্য ঘিরে অতীতেও শোরগোল শুরু হয়েছিল।
যদিও বিরোধীরা বিষয়টিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি বলেই দেখছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, অনুব্রতর এই মন্তব্য নতুন কিছু বিষয় নয়। এর আগেও তিনি এ ধরনের মন্তব্য দিয়ে বিরোধী দলগুলিকে চমকানোর চেষ্টা করেছেন। তবে ২০২৬ এ নির্বাচনের আগে তৃণমূল যত হিংসাত্মক কার্যকলাপ করবে, ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন হাতে গরমে পেয়ে যাবে। বিজেপির বোলপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, "অনুব্রত ভালোই খেলেন সেটা আমরা জানি। তার পুরস্কার স্বরূপ আড়াই বছর তিহারে জেল খেটেছেন। এমনকী, তার কৃতকর্মের জন্য তাঁর মেয়েও ছাড়া পায়নি। তাই নতুন করে উনি কী খেলেন, দেখার আগ্রহ রইল।"
