আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার রাতে ট্রুথ সোশ্যালে নিজের হ্যান্ডলে ভারতকে ফের আক্রমণ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পুতিনের দেশকে টাকা জোগাচ্ছে ভারত। এই কারণে, ধীরে ধীরে ভারতের উপর শুল্ক চাপানো হবে। এই মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিচারিতার সমালোচনা করেছে কেন্দ্র। এর পাশাপাশি ট্রাম্পের শুল্কের হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে বর্ণনা করেছে ভারত। এর পাশাপাশি, জাতীয় স্বার্থ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।

বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতকে নিশানা করছে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ঐতিহ্যবাহী সরবরাহ ইউরোপে সরিয়ে নেওয়ার পরই ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি শুরু করে। সেই সময় আমেরিকা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা জোরদার করার জন্য ভারতের এই ধরনের আমদানিকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করেছিল।

মন্ত্রক জানিয়েছে, এই ধরণের আমদানির উদ্দেশ্য ভারতীয় নাগরিকদের জন্য জ্বালানির দামের ভারসাম্য বজায় রাখা। যদিও দেখা যাচ্ছে, যে সব দেশ ভারতের নিন্দা করছে তারাই রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে গিয়েছে। আমাদের মতো সেই সব দেশের ক্ষেত্রে ওই পণ্যগুলি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আরও পড়ুন: ভারতের তেলের টাকায় ইউক্রেনে মানুষ মারছে রাশিয়া, দাবি ট্রাম্পের, আরও বেশি শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি

ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে ইইউ-র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ৬৭.৫ বিলিয়ন ইউরো (৭৮.১ বিলিয়ন ডলার) এবং ২০২৩ সালে পরিষেবা বাণিজ্য ছিল ১৭.২ বিলিয়ন ইউরো। এই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ভারত বলেছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইইউ-র বাণিজ্য ভারতের মোট বাণিজ্যের চেয়ে ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি’। ২০২৪ সালে ইইউ রেকর্ড পরিমাণ ১৬.৫ মিলিয়ন টন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কিনেছে রাশিয়ার থেকে। ২০২২ সালে এই পরিমাণ ছিল ১৫.২১ মিলিয়ন টন।

মন্ত্রক বিবৃতিতে আরও জানিয়েছে, শুধু জ্বালানিই নয়, ইউরোপ এবং রাশিয়ার মধ্যে সার, খনিজ পদার্থ, রাসায়নিক, লোহা, স্টিল, যন্ত্রপাতি এবং গাড়ির সরঞ্জামের বাণিজ্যও হয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকা তার পরমাণু শিল্পের জন্য রাশিয়া থেকে ইউরোনিয়াম হেক্সাফ্লুওরাইড কেনা বন্ধ করেনি। এর পাশাপাশি, বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের জন্য প্যালাডিয়াম, সার এবং অন্যান্য রাসায়নিক আমদানি করাও অব্যাহত রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ৫.২ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২১ সালে এটি প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। আমেরিকা রাশিয়ার উপর কোনও ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করেনি।

আরও পড়ুন: কত টাকা বেতন পান টিম কুক? অন্যান্য কর্মীদেরই বা কত টাকা দেয় অ্যাপল

মস্কোর ভারতীয় দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেষ হওয়া বছরে নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রেকর্ড ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যা অতিমারি-পূর্ববর্তী ১০.১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের চেয়ে প্রায় ৫.৮ গুণ বেশি।

এদিকে, ২০২৪ সালে ইইউ ছিল রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। রাশিয়ার মোট বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্যের ৩৮.৪ শতাংশ ছিল ইইউ-র সঙ্গে। ২০২০ সালে মস্কোর শীর্ষ অংশীদার ছিল ইইউ। ২০২১ সালে রাশিয়ার সাথে ইইউর পণ্য বাণিজ্য ২৫৭.৫ বিলিয়ন ইউরো থেকে ২০২৪ সালে প্রায় ৭৪ শতাংশ কমেছে।

এই বছরের শুরুতে মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া ভারতের প্রধান তেল সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে প্রতিদিন এক লক্ষ ব্যারেলেরও কম আমদানি হচ। যা ছিল মোট আমদানির ২.৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রতিদিন ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি আমদানি করছে ভারত। যা সামগ্রিক আমদানির ৩৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার মতে, ২০২৪ সালে রাশিয়ার ৭০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল ভারতে রপ্তানি করা হয়েছিল। ভারত জানিয়েছে যে, তেল আমদানির উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় উপভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি নিশ্চিত করা।