আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় ভয়াবহ দুর্যোগ। মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং তার পরবর্তী ফ্ল্যাশ ফ্লাডে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে রাজ্যজুড়ে। সূত্র অনুযায়ী মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট, পাহাড়ি গ্রামের ধারালিতে এই দুর্যোগের ফলে কমপক্ষে ৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আরও ১৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। খবর অনুযায়ী, প্রবল বৃষ্টিপাত এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উদ্ধারকাজ জোরকদমে চলছে।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভয়াবহ দৃশ্যগুলোতে দেখা যাচ্ছে, হঠাৎ প্রবল বেগে নেমে আসা বন্যার জল ঝড়ের গতিতে হোটেল, বাড়ি, দোকান, গাছপালা, যানবাহন সহ যা কিছু সামনে পড়েছে সবকিছুই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে, এই দুর্যোগকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দুই জ্যোতিষীর মধ্যে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
বিরোধ শুরু হয় জ্যোতিষী প্রিয়াঙ্কার একটি পোস্ট থেকে। নিজেকে বৈদিক জ্যোতিষী ও আধ্যাত্মিক জাগরণকারী হিসেবে দাবি করা এই প্রিয়াঙ্কাদেবী সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দীর্ঘ পোস্টে লিখেছেন, 'কিছু জ্যোতিষী দাবি করছেন যে বৃহস্পতি (জুপিটার) অর্দ্রা নক্ষত্রে থাকার কারণে এই ভয়াবহ মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ঘটেছে। কিন্তু তাঁরা জানেন না যে, এই ধরনের জলবায়ুবিষয়ক বিপর্যয়ের পেছনে আসল কারণ হলো ‘শিয়াট’ নামক এক স্থির তারা। বৃহস্পতি অর্দ্রায় দুর্যোগ ঘটাতে পারে ঠিকই, কিন্তু মেঘ ভাঙা বৃষ্টির পেছনে শিয়াটই দায়ী।'
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, শিয়াট (Scheat) হল এমন একটি স্থির তারা যা সাধারণত বন্যা, জাহাজডুবি, ঝড় এবং মেঘ ভাঙা বৃষ্টির সঙ্গে জড়িত থাকে। বিশেষ করে যখন এটি মন্দ গ্রহ যেমন মঙ্গল, শনির প্রভাবে থাকে। বর্তমানে শনি এবং নেপচুন এই স্থির তারাটির নিকটবর্তী রয়েছে, যা ৬ ডিগ্রি পিসেস রাশিতে অবস্থান করছে। তিনি আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এই সময়ে জলের মাধ্যমে ছড়ানো রোগ বা ফ্লু-জাতীয় অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তবে এটি কোনও মহামারিতে রূপ নেবে না।
এই পোস্টের পর এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, 'আপনার আঙুল যে অ্যাস্ট্রোশর্মিষ্ঠার দিকে, তা পরিষ্কার।' এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা জবাব দেন অপর জ্যোতিষী শর্মিষ্ঠা।
শর্মিষ্ঠা প্রিয়াঙ্কার ব্যাখ্যাকে ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, 'তাঁর জ্যোতিষ নিয়ে তেমন কোনও জ্ঞান নেই বলেই এসব আজেবাজে কথা বলছেন। বিতর্ক বা আলোচনার সাহস নেই, তাই আমাকে ব্লক করেছে। শুধু ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য বড় প্রোফাইলকে আক্রমণ করছে।'
তিনি আরও বলেন, 'মূল বিষয় হলো উত্তরাখণ্ডের দুর্যোগ। ২০১৩ সালেও যখন বন্যা হয়েছিল তখন বৃহস্পতি অর্দ্রা নক্ষত্রে ছিল। এবার ২০২৫ সালেও বৃহস্পতির অর্দ্রা ট্রানজিটের কারণে এই বন্যা ও দুর্যোগ হচ্ছে। জ্যোতিষ বিদ্যা মানে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বসে ‘গুরু মা’ হয়ে যন্ত্রা বিক্রি করা নয়। এটা জীবনে পেতে হলে ‘কৃপা’ দরকার।'
প্রসঙ্গত, এর আগেও শর্মিষ্ঠা বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। চলতি বছরের ১২ জুন, আহমেদাবাদের মেঘানীনগরে বিমান দুর্ঘটনায় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হলে, শর্মিষ্ঠা দাবি করেন যে তিনি এই ধরনের একটি দুর্ঘটনার পূর্বাভাস আগেই দিয়েছিলেন। ৫ জুন করা এক পোস্টে তিনি ২০২৫ সালে বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলেন।
এই পোস্টটি ১২ জুনের দুর্ঘটনার পরে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে। সেখানে তিনি লেখেন, 'এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় এতগুলি প্রাণ চলে গেল। বৃহস্পতি এখনও অর্দ্রায় প্রবেশ করেনি, ভারতের মঙ্গল মহাদশাও শুরু হয়নি। ইতিমধ্যেই এমন দুর্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে।'
তিনি আরও দাবি করেন, ২০২৫ সালে বিমান পরিবহন খাতে একদিকে যেমন উন্নতি হবে, অন্যদিকে নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকবে। অনেকেই তার এই মন্তব্যকে 'সংবেদনশীলতার অভাব' বলে সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি এও অভিযোগ তোলেন যে, তিনি মানুষের দুর্ভোগকে নিজের পূর্বাভাস প্রচারের হাতিয়ার বানাচ্ছেন।
