আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের শত্রুদেশ বলতে প্রথমেই চীন এবং পাকিস্তানের নাম মনে আসে। তবে আরও কয়েকটি দেশ নীরবে ভারতের বিরুদ্ধে সক্রিয়। তাদের মধ্যে একটি হল তুরস্ক। গত মে মাসে এরদোগানের দেশ 'অপরেশন সিঁদুর'-এর সময়ে প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। তারপর থেকেই ভারতের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক তলানীতে। 

গত বছর গণঅভ্যুত্থানে পর বাংলাদেশে সরকার বদল হয়েছে। নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার বাংলাদেশের শাসনে। দেখা যাচ্ছে, নয়া সরকারের আমলে বাংলাদেশের কিছু পদক্ষেপ ভারতের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। যা নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে 'জামায়াতে ইসলামী' নামে একটি ইসলামী চরমপন্থী গোষ্ঠী তুরস্ক থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ পাচ্ছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা এবং সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করার জন্য তুরস্ক এই নক্কারজনক কাজ করছে বলে জানা গিয়েছে। 

তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করছে। এই সমর্থন কেবল জেহাদী মতাদর্শ ছড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আর্থিক এবং সামরিক সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত।

জানা গিয়েছে, তুরস্কের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক- ঢাকার মগবাজারে জামায়াতে ইসলামী গোষ্ঠীর জন্য একটি নতুন দপ্তর স্থাপনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রচুর অর্থ পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, জামায়াতের একজন ছাত্র নেতা সাদিক কাইয়ুম বর্তমানে তুরস্ক সফরে। তাঁর সফরের সময় তিনি কেবল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেই দেখা করছেন না বরং অস্ত্রের গুদাম এবং অস্ত্র কারখানাগুলিও ঘুরে দেখছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান দক্ষিণ এশিয়ার ইসলামী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে তাঁর প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের মুসলমানদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, তুরস্ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মসূচির আয়োজনও করছে। 

এদিকে, বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান আশিক চৌধুরীও তুরস্ক সফর করেছেন এবং তাঁর সফরের সময় তিনি একটি অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। যদিও বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কে কোনও সামরিক কর্তা পাঠায়নি, তবুও এই সফরটিতে অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও তথ্য উপদেষ্টাও তুরস্কে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এই বৈঠকসমন্ধে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। , যা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

জানা গিয়েছে, তুরস্ক গোপনে মায়ানমারে আরাকান সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছে, যা ভারতের জন্য- বিশেষ করে এ দেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন আঞ্চলিক, বিচ্ছিন্নবাদী গোষ্ঠী সংযোগ ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশের জন্য বেশ ঝুঁকির। 

ভারতের জন্য তুরস্কের কার্যকলাপ কতটা ঝুঁকির?

তুরস্ক ধীরে ধীরে কর্মশালা আয়োজন এবং বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্র চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রচুর অর্থায়ন করছে এবং চরমপন্থী মতাদর্শ প্রচার করছে।

তুরস্কের এই ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠতে পারে। অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরামের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি যদি এই অঞ্চলে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলি শক্তি অর্জন করে তবে প্রভাবিত হতে পারে।

জামাত-ই-ইসলামির মতো গোষ্ঠীগুলি, অর্থ এবং অস্ত্রের আকারে তুরস্কের সহায়তায়, এই সংবেদনশীল এলাকায় উগ্রপন্থী ধারণা ছড়িয়ে দিতে পারে। কেরলে, জামাতের সঙ্গে যুক্ত এনজিওগুলি ইতিমধ্যেই সক্রিয় রয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুসারে, তুরস্ক পাকিস্তানের আইএসআই-কে আর্থিকভাবে সাহায্য করছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এর থেকে বোঝা যায় যে তুরস্ক হয়তো ভারতের জন্য সমস্যা তৈরির জন্য বাংলাদেশকে একটি নতুন ফ্রন্ট হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে।