আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাবা ফিরেছেন বহুদিন পর বাড়িতে। আনন্দে আত্মহারা ছিল ১২ বছরের নাবালক। সারাদিন বাবার সঙ্গেই থাকত। রাতে বাবার পাশেই শুত। তার ঘুমের মধ্যেই ঘটে যায় হাড়হিম হত্যাকাণ্ড।‌ ঘুমের মধ্যেই তার মুখে ছিটকে আসে রক্ত। উঠে বসে দেখে, বিছানাও ভেসে গেছে রক্তবন্যায়। সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে বাবার ভয়ঙ্কর পরিণতি দেখে শিউরে ওঠে সে। 

 

রাতে বাবার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল নাবালক। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় তার। মুখে ছিটকে এসেছিল রক্ত‌। তাতেই ঘুমই থেকে উঠে পড়ে। বিছানায় বসেই সে দেখতে পায়, মা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করছে তার বাবাকে। বাবার গলায় পরপর ধারালো অস্ত্রের কোপ বসাচ্ছে মা। 

 

চিৎকার করে তখনই গ্রামবাসীদের জানাতে চেয়েছিল নাবালক। কিন্তু রক্তমাখা ধারালো অস্ত্র হাতে মা পাল্টা হুমকি দেয়, মুখে কুলুপ এঁটে যেন সে থাকে। বিষয়টি বাইরে ফাঁস করলেই, বাবার মতোই ভয়াবহ পরিণতি হবে তার। তাকে খুন করতেও হাত কাঁপবে না তার। যদিও বিষয়টি বেশিক্ষণ আর লুকানো যায়নি। 

আরও পড়ুন: জনপ্রিয়তার লোভেই সব শেষ! ট্রেনের উপরে উঠে রিল শুট, ১৬ বছরের কিশোরের পরিণতিতে আঁতকে উঠলেন সকলে

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের পূর্ণিয়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, ৪৫ বছরের বালো দাস নামের এক প্রৌঢ়কে কুপিয়ে খুন করে তার স্ত্রী ৩৫ বছরের উষা দেবী। বাবাকে কুপিয়ে খুনের ঘটনাটি প্রথমে ফাঁস করেছে দম্পতির ১২ বছরের ছেলে। এরপরই গ্রামে পৌঁছয় পুলিশ। দীর্ঘ জেরায় স্বামীকে খুনের ঘটনাটি স্বীকার করে নিয়েছে ঊষা। 

পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, বালো দাস পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কাজের সূত্রে পাঞ্জাবে থাকতেন। অন্যদিকে বিহারের পূর্ণিয়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে থাকত ঊষা। কাজের ফাঁকে ছুটি পেলেই গ্রামে ফিরতেন বালো। টাকাও পাঠাতেন ঊষাকে। পাঞ্জাবে বসেই একদিন খবর পান, তাঁর গ্রামের জমিটি বিক্রি করে দিয়েছে ঊষা। সেই জমিতেই ছিল তাঁর একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই, একটি বাড়ি। বালোকে না জানিয়েই জমিটি বিক্রি করে দেয় স্ত্রী। 

 

খবর পেয়েই দ্রুত গ্রামে ছুটে আসেন বালো। জমি বিক্রিকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল অশান্তিও হয়। গ্রামে থাকাকালীন বালো জানতে পারেন, ঊষা গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছে। বিয়ে ভেঙে, প্রেমিকের সঙ্গে থাকার জন্য জমি বিক্রি করে দিয়েছে সে। জমি বিক্রি করার বুদ্ধি ঊষাকে দিয়েছিল তার প্রেমিক। 

 

বালো বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরেছে, টের পেয়েছিল ঊষা। এরপরই খুনের পরিকল্পনা করে সে। দাবিয়া নামের এক ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাঝ রাতে, ঘুমের মধ্যে বালোর গলায় কোপ বসায় সে। সেই রক্ত ছিটকে এসে পড়ে নাবালক সন্তানের মুখে। ঘুম ভাঙার পর এই দৃশ্য দেখে আঁতকে ওঠে সে। 

 

সেই রাতে সন্তানকে খুনের হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি ঊষা। পরেরদিন সকালে খেলাধুলার অজুহাতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছুটে যায় সে। সেখানে পৌঁছে জানায়, মা তার বাবাকে আগের রাতে কুপিয়ে খুন করেছে। সেই আত্মীয়রা পুলিশে খবর দেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঊষাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দীর্ঘ জেরায় স্বামীকে খুনের ঘটনাটি সে স্বীকার করে নেয়।