আজকাল ওয়েবডেস্ক: সন্তানলাভের আনন্দ স্থায়ী হল না হায়দরাবাদের এক দম্পতির। সন্তানলাভের কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁরা জানতে পারলেন সদ্যোজাত সন্তানের বাবা অন্য কেউ। ঘটনাটি ঘটেছে সেকেন্দরাবাদের একটি ক্লিনিকে। এই ক্লিনিকেই ‘বাণিজ্যিক সারোগেসি’র মাধ্যমে জন্ম নেয় শিশুটি। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে সদ্যোজাত শিশুর সঙ্গে বাবার কোনও জৈবিক সম্পর্ক নেই।
তেলঙ্গানার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা নিশ্চিত করেছেন যে, দম্পতির অজান্তে এক অপরিচিত ব্যক্তির শুক্রাণু ব্যবহার করা হয়েছিল শিশুর জন্মে।
বর্তমানে শিশুটি একটি বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত গাফিলতির পরিণতি তাকে ভোগ করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগের কেন্দ্রে ‘সৃষ্টি টেস্ট টিউব বেবি সেন্টার’ নামের একটি ক্লিনিক। শনিবার, হায়দ্রাবাদ পুলিশ ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে ও মামলা দায়ের করেছে। গোপালপুরম থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দম্পতির অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে তল্লাশিও চালানো হচ্ছে বলে খবর পুলিশ সূত্রে।
আরও পড়ুন: ভাইরাল ‘আপত্তিকর’ ভিডিও! দশ নায়িকার গোপন মুহূর্ত ফাঁস হওয়ায় কম্পন বলিউডে
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই এই একই ধরনের অভিযোগ ওঠে অপর একটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধেও। হায়দরাবাদের জমজ শহর বলে পরিচিত সেকেন্দরাবাদ থেকে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেফতার করেছে ‘ইন্ডিয়ান স্পার্ম টেক ক্রায়োসিস্টেম ক্লিনিক’-নামের একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকের মালিক-সহ সাত জনকে। অভিযোগ, এই ক্লিনিকের মালিক পঙ্কজ সোনির নেতৃত্বেই চলত এই চক্র। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, পঙ্কজ এই কাজে নিয়োগ করেছিলেন একাধিক ‘এজেন্ট’। এই এজেন্টদের কাজ ছিল রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে, দরিদ্র, অশিক্ষিত মানুষদের খুঁজে বের করা। এরপর তাঁদের নানান প্রলোভন দেখিয়ে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুদাতা হিসেবে কাজে লাগানো হত।
আরও পড়ুন: ‘ভুল রাস্তায়’ সঙ্গম! বিয়ের চার বছরেও সন্তান না আসার পর সঠিক পদ্ধতি জানতে পারলেন দম্পতি
প্রাথমিক পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, দাতাদের মধ্যে যাঁরা অল্প হলেও লেখাপড়া জানেন, তাঁদের ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকা ‘পারিশ্রমিক’ দেওয়া হত। আর পড়াশোনা জানেন না এমন দিনমজুর বা ভবঘুরে পুরুষদের একবেলার বিরিয়ানি বা এক বোতল দেশি মদেই রাজি করানো হত স্পার্ম ডোনেশনে। শুধু পুরুষ নন, দরিদ্র নারীদেরও ব্যবহার করা হতো দাতা হিসাবে। কিছু ক্ষেত্রে মহিলা ভিক্ষুকদের ডিম্বাণু দেওয়ার জন্য ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পুরো ঘটনাই চূড়ান্ত অনৈতিক এবং আইন-বহির্ভূত। ভারতে স্পার্ম ও এগ ডোনেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ম রয়েছে কেন্দ্রের। দাতা বা ডোনারের নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ডও রয়েছে। ডোনারের বয়স, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা, রোগের ইতিহাস এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে কোনও নিয়মই মানা হয়নি বলে অভিযোগ।
|
বহু নিঃসন্তান দম্পতিই এখন সন্তানলাভের আশায় আইভিএফ পদ্ধতির শরণাপন্ন হচ্ছেন। তাঁরা যাতে সুস্থ ডোনারের জিন পান তা নিশ্চিত করা ক্লিনিকের কাজ। এক্ষেত্রে তার উল্টোটাই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অপুষ্ট বা রোগাক্রান্ত ডোনারের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতের শিশুদের স্বাস্থ্য, জিনগত গুণাবলি বা মানসিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে চিকিৎসকমহলে। এতদিন এই চক্র কীভাবে সক্রিয় ছিল? উঠছে সেই প্রশ্নও। ক্লিনিকটি কীভাবে লাইসেন্স পেল? আরও কত ক্লিনিক এখনও গোপনে এই ধরনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে সেসব নিয়েও। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে আরও বেশ কিছু ক্লিনিক এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নাম উঠে আসতে পারে। ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকও। দেশের সমস্ত আইভিএফ ক্লিনিকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
