আজকাল ওয়েবডেস্ক: আক্কেল দাঁত উঠলে ব্যথায় কাবু হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এতদিন যন্ত্রণার কারণ হিসেবেই পরিচিত ছিল এই দাঁত। চিকিৎসকেরাও আক্কেল দাঁত তুলে ফেলার পক্ষেই মত দিতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা উল্টে দিয়েছে সব হিসেব। বিজ্ঞানীরা এখন জানাচ্ছেন, যা এতদিন অপ্রয়োজনীয় বলে ফেলে দেওয়া হত, তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বহু দুরারোগ্য ব্যাধি উপশমের চাবিকাঠি। আক্কেল দাঁতের মজ্জা থেকে পাওয়া স্টেম সেল চিকিৎসাবিজ্ঞানে হয়ে উঠতে পারে সোনার খনি!
গবেষকদের মতে, প্রতিটি আক্কেল দাঁতের গভীরে থাকে এক ধরনের নরম অংশ, যা ‘ডেন্টাল পাল্প’ নামে পরিচিত। এই ‘ডেন্টাল পাল্প’ স্টেম সেলের ভান্ডার। এই বিশেষ কোষগুলি নিজেদের চরিত্র বদলে যে কোনও অঙ্গে রূপান্তরিত হতে পারে। অর্থাৎ সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে এই স্টেম সেল থেকে স্নায়ুকোষ (নিউরন), হাড়, তরুণাস্থি, এমনকি হৃৎপিণ্ডের পেশি পর্যন্ত তৈরি করা সম্ভব। মানুষের অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারোতেও এই ধরনের ‘মেসেনকাইমাল স্টেম সেল’ পাওয়া যায়, কিন্তু সেখান থেকে সেই স্টেম সেল সংগ্রহ করা খুবই ঝুঁকির। বরং আক্কেল দাঁত থেকে তা সংগ্রহ করা অনেক সহজ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ। যেহেতু এই দাঁত ফেলেই দেওয়া হয়, তাই এটি নিয়ে নৈতিকতা সংক্রান্ত বিতর্কও প্রায় নেই বললেই চলে।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত বীর্যপাতে মৃত্যু! শুক্রাণু দান করার নেশায় ডাক্তারি পড়ুয়ার করুণ পরিণতি জানলে চোখে জল আসবে
সম্প্রতি স্পেনের বাস্ক কান্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ গ্যাসকন ইবারেটক্সের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণা এই বিষয়ে নতুন দিশা দেখিয়েছে। এই গবেষণাপত্র অনুযায়ী, আক্কেল দাঁতের স্টেম সেলকে পরীক্ষাগারে এমন ভাবে রূপান্তরিত করা সম্ভব, যাতে তা বৈদ্যুতিকভাবে সক্রিয় স্নায়ুকোষের মতো কাজ করে। এই পদ্ধতি মানবদেহে সফল ভাবে প্রয়োগ করা গেলে পার্কিনসন, আলঝাইমারের মতো স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় যুগান্তকারী বদল আসতে পারে। ইঁদুরের উপর চালানো পরীক্ষায় ইতিমধ্যেই সাফল্য মিলেছে। দেখা গিয়েছে, এই স্টেম সেল মস্তিষ্কের সঞ্চালন ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এবং ক্ষতিকারক প্রোটিন জমা হওয়া রুখতে সাহায্য করে।
শুধু স্নায়ুতন্ত্রই নয়, হাড় এবং তরুণাস্থি পুনর্গঠনেও এই কোষ কাজে আসতে পারে। ফলে অস্থি সংক্রান্ত চিকিৎসা (অর্থোপেডিক) এবং দাঁতের চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার নিয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। এমনকি, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা হার্ট ফেলিওরে আক্রান্ত ইঁদুরের উপর এই কোষ প্রয়োগ করে হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, যেহেতু কোনও ব্যক্তির নিজের দাঁত থেকেই কোষ সংগ্রহ করে তা শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়, তাই ‘ইমিউন রিজেকশন’ বা দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কোনও ঝুঁকি থাকে না। ফলে দাতা খোঁজার দীর্ঘ সময় এবং জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
যদিও মানুষের উপর এর প্রয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা প্রমাণ করার জন্য আরও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন, তবু বিজ্ঞান দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। সবমিলিয়ে একসময় ফেলে দেওয়ার জিনিস ছিল, সেটাই হয়ে উঠছে পুনরুজ্জীবনী চিকিৎসার (রিজেনারেটিভ মেডিসিন) এক শক্তিশালী হাতিয়ার। শিরদাঁড়ার চোট থেকে হৃদরোগ বহু কঠিন রোগের চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে আক্কেল দাঁত।
